Ajker Patrika

কাঁদছেন ইব্রাহিমের মা-বাবা তবু লাশ আনছে না বিজিবি

সৈয়দ মো. মুঈনুল হক, ঢাকা ও তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ০১
কাঁদছেন ইব্রাহিমের মা-বাবা  তবু লাশ আনছে না বিজিবি

‘বিজিবি সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা লাশ ফেরত আনবে না। কিন্তু ছেলে হারানোর যন্ত্রণা তো আমি আর সইতে পারছি না। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, যেন আমার ইব্রাহিমের লাশটা একবার দেখতে পাই।’ ছেলের শোকে কাঁদছেন ফুরকুনি বেগম। তাঁর ইব্রাহিমকে গুলি করে লাশ নিয়ে গেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বিএসএফ লাশ ফেরত দিতে চাইলেও নিচ্ছে না বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

এত দিন হয়ে গেলেও বাংলাদেশির লাশ কেন ফেরত আনা হচ্ছে না, জানতে চাওয়া হয়েছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আমির হোসেন মোল্লার কাছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা লাশ গ্রহণে প্রস্তুত নই। তারা (বিএসএফ) পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারবে, আর আমাদের কাছে লাশ তুলে দেবে, এটা হতে পারে না।’

লাশ না নেওয়ার এই অবস্থান বিজিবি কবে নিল, এ প্রশ্নে নিরুত্তর কর্নেল আমির হোসেন। প্রসঙ্গ পাল্টে তিনি বলেন, ‘ওই লাশ বাংলাদেশি কারও কি না, তা আমরা যাচাই করে দেখছি।’

বিজিবি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ২টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন মো. ইব্রাহিম আলী (২৮)। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের আজমতপুর গ্রামের ঢুলিপাড়ার আবু তাহের দুখুর ছেলে।

এত দিন পেরিয়ে গেলেও লাশ এখনো বিএসএফের কাছেই।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে ইব্রাহিমের বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায় তাঁর মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তানকে। ইব্রাহিমের চার বছর বয়সী দুটি যমজ সন্তান রয়েছে। গরুর রাখাল ইব্রাহিমই ছিলেন এ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। মৃত্যুর পর ৩৮ দিন পেরিয়ে গেছে। লাশটা পেয়ে কবর দিতে পারলে এত দিন হয়তো আস্তে আস্তে শোক ভোলার চেষ্টা করতে পারতেন তাঁরা। কিন্তু এর বদলে তাঁদের দিন কাটছে লাশের অপেক্ষায়। সে অপেক্ষা আর ফুরায় না, চোখের জলও শুকায় না।

স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় ইব্রাহিমের স্ত্রী আয়েশা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার দুটি যমজ সন্তান রয়েছে, যাদের বয়স চার বছর। তারা বারবার বাবাকে দেখতে চাইছে। কিন্তু তাদের বাবা যে পৃথিবীতে নেই এ কথা তাদের বলি কীভাবে!’ পরিবারের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার সংসারে তো আর রোজগার করার কেউ নেই। আমি দুই সন্তান নিয়ে কী খাব, কোথায় যাব? যেহেতু মরেই গেছে আর তো কিছু করার নেই। অন্তত মরদেহটা দফা করতে পেলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।’

ইব্রাহিমের স্ত্রী যখন এসব বলছিলেন তখন ডুকরে কাঁদছিলেন তাঁর মা ফুরকুনি বেগম। পাশে ভেজা চোখ বারবার মুছছিলেন বাবা আবু তাহের দুখু। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফুরকুনি বেগম বারবার অনুনয় করতে থাকেন তাঁর ইব্রাহিমের লাশটা আনার ব্যবস্থা যেন সরকার করে।

ইব্রাহিমের এক চাচাতো ভাই বলেন, তাঁর ভাই নিহত হওয়ার তিন দিন পর বিএসএফ লাশ ফেরত দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তখন বিজিবি সাড়া দেয়নি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিএসএফের গুলিতে ১৬ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। পত্রিকা ঘেঁটে আসকের করা ওই পরিসংখ্যান গত ১৩ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়।

সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা দুঃখজনক উল্লেখ করে আসকের পরিচালক (কর্মসূচি) নীনা গোস্বামী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বজনের লাশ পাওয়া ওই পরিবারের অধিকার। লাশ পেতে এত দেরি হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সময়মতো পদক্ষেপ নিলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত