Ajker Patrika

ঘুষ এবং অঙ্ক

সম্পাদকীয়
ঘুষ এবং অঙ্ক

আসুন, একটু অঙ্ক কষি। ৬৯৬ জন সাধারণ আনসার ও ভিডিপির সদস্য যদি তাঁদের উপজেলা আনসার ও ভিডিপির কর্মরত দলনেতাদের ১ হাজার টাকা করে ‘ঘুষ’ দেন, তাহলে মোট কত টাকা হয়? খুব সহজ হিসাব। ৬৯৬-কে ১ হাজার দিয়ে গুণ দিলেই উত্তর মিলবে—৬ লাখ ৯৬ হাজার! এটি কোনো ক্লাসের গণিত বইয়ের অঙ্ক নয়। সত্যি সত্যি এমন একটি অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায়।

আজকের পত্রিকায় সোমবার প্রকাশিত হয়েছে ‘হাজার টাকায় কিনতে হলো ভোটের ডিউটি’ শিরোনামের একটি খবর। শিরোনাম দেখে মনে হতে পারে কোনো প্রার্থী হয়তো নির্বাচনে তাঁর পক্ষে ডিউটি দেওয়ার জন্য কাউকে হাজার টাকা ‘ঘুষ’ দিয়েছেন। কিন্তু না, ব্যাপারটা খোলাসা হয় পুরো খবর পড়লে।

২১ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঘিওর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। সেই নির্বাচনে উপজেলার ৫৮টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন ৬৯৬ জন আনসার ও ভিডিপির সদস্য। সে জন্য শনিবার যাচাই-বাছাই করে সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এই সদস্যদের নির্বাচনের ‘ডিউটি’ পেতে নাকি ‘ঘুষ’ দিতে হয়েছে। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০ জন আনসার সদস্য এ কথা জানিয়েছেন পত্রিকার সংবাদদাতাকে। বেশির ভাগ সদস্যকে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।

তবে অভিযোগের ব্যাপারে অবগত নন দাবি করে উপজেলা আনসার ও ভিডিপির কর্মকর্তা ফাতেমা আক্তার জানিয়েছেন, ১৭ জন আনসার সদস্য ভুয়া সনদ দিয়ে ডিউটি নিতে এসেছিলেন। তাঁরা বাদ পড়েছেন। ফাতেমা আক্তারের ধারণা, বাদ পড়া ব্যক্তিরা হয়তো এমন ‘মিথ্যাচার’ করতে পারেন। কিন্তু ভুয়া সনদধারী সদস্য যদি ১৭ জন হয়ে থাকে আর অভিযোগকারী যদি ২০ জন হন, তাহলে বাকি তিনজন কারা? অঙ্কটা এখানে মেলানো কঠিন হয়ে গেল!

আবার, ঘিওর সদর ইউনিয়ন আনসার দলনেতা (সহকারী কমান্ডার) ছায়া রানী ও সামেজ উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তাঁরা নিজে থেকেই জানান যে তাঁদের কয়েকজন আত্মীয়স্বজনকে ডিউটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্বজনপ্রীতি করে যে নীতিহীনতার পরিচয় দিলেন তাঁরা, এ কথাটি কি ছায়া রানী বা সামেজ উদ্দিন বোঝেন? তাঁদের বোধোদয় হোক, আমরা সেই প্রত্যাশা রাখি।

চলুন, আরেকটা অঙ্কের কথা জেনে নিই। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই দিনে দায়িত্ব পালন বাবদ প্রতি আনসার সদস্য সম্মানী পাবেন ২ হাজার ৮৫০ টাকা এবং প্লাটুন কমান্ডার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্লাটুন কমান্ডাররা পাবেন ৩ হাজার ১৫০ টাকা করে।

তাঁদের অভিযোগ সত্যি হয়ে থাকলে এই টাকা থেকে যদি ৮০০ বা ১ হাজার টাকা ‘দলনেতাদের’ দিয়ে দিতে হয়, তাহলে তাঁদের যে তেমন কিছুই থাকে না, সেটা বোধ হয় ‘দলনেতারা’ বুঝতে চান না। তাই তাঁরা কখনো ‘সত্যিকারের দলনেতা’ হয়ে উঠতে পারেননি। নইলে সাধারণ সদস্যরা তাঁদের সত্যিকারের সম্মানটাই করতেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতেন না। এই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হোক, যথাযথ বিচার হোক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত