Ajker Patrika

হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগ ও সততা

সম্পাদকীয়
হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগ ও সততা

এ কথা মানতে হবে যে শিশু-কিশোরেরা স্কুলের পাশাপাশি পরিবারের কাছ থেকেও শেখে। দুই জায়গাতেই আদর্শ শিক্ষার চর্চাটা জরুরি। তবে পরিবারের সঙ্গে যেহেতু শিশু-কিশোরেরা বেশি সময় কাটায়, তাই আদর্শ শিক্ষার জন্য পরিবারই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে পারে। শিশু বয়স থেকে আদর্শ শিক্ষা না পেলে যে কেউ বিপথে চলে যায়—এ কথা নতুন নয়। শিশুকালটাই তো আদর্শ শিক্ষার ভিত্তি মজবুতের সময়।

আজকের পত্রিকার রংপুর সংস্করণে মন ভালো করা একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। আদর্শের খবর। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট্ট বালক মুনতাসীর আল মুবিনের সততার খবর। মুবিন পড়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী ল্যাবরেটরি স্কুলে। গত সোমবার মুবিন তার বাবার সঙ্গে মোটরসাইকেলে মোড়লহাট যাচ্ছিল। পথে চলছিল রাস্তা পাকা করার জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। তখন মুবিনের বাবা মোটরসাইকেল নিয়ে আগাচ্ছিলেন আর মুবিন হেঁটে তাঁর পেছন পেছন যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই মুবিনের চোখে পড়ে রাস্তায় পড়ে থাকা একটি মানিব্যাগের ওপর। মুবিন তার বাবাকে অনুরোধ করে মানিব্যাগটি তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে।

মুবিনের বাবা আল মামুন ছেলের কথায় খুশি হন। মালিককে খুঁজে বের করে ফিরিয়ে দেন মানিব্যাগটি। মালিক আবদুর রহিমের বাড়ি বালিয়াডাঙ্গীর বড় পলাশবাড়ী গ্রামে। তাঁর মানিব্যাগে ছিল প্রায় ৮ হাজার টাকা, দুটি ব্যাংকের ডেবিট কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কিছু কাগজ। তাড়াহুড়ো করে বাজারে যাওয়ার সময় মানিব্যাগটি হারিয়ে ফেলেছিলেন রহিম। তিনি ভাবেননি এটি আর ফিরে পাবেন। কিন্তু সবকিছুই তিনি ফেরত পেয়েছেন শুধু ছোট্ট একটি শিশুর সততার কারণে।

মুবিনের পাশাপাশি তার বাবা এবং পরিবারের অন্যরাও ধন্যবাদ প্রাপ্য। সেই সঙ্গে মুবিনের স্কুলের শিক্ষকেরাও। নিশ্চয়ই সবার প্রচেষ্টাতেই মুবিন যথাযথ আদর্শের শিক্ষাটা পেয়েছে। আর উতরে গেছে সততার পরীক্ষায়। মুবিনের বাবা চাইলেই পারতেন টাকাগুলোর লোভে পড়তে। পারতেন মানিব্যাগটি ফেরত না দিতে। অথবা পারতেন টাকা রেখে মানিব্যাগ ফিরিয়ে দেওয়ার সময় মিথ্যা বলতে যে তিনি এতে কোনো টাকা পাননি। কিন্তু আল মামুন এগুলোর কোনোটিই করেননি। ছেলের সঙ্গে সঙ্গে সততার পরীক্ষায় তিনিও উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আমাদের এই ঘুণে খাওয়া সমাজে এখন সততার বড্ড অভাব। সততা নেই বলেই দুর্নীতি হচ্ছে। ঘুষ খাওয়া হচ্ছে। চুরি করা হচ্ছে। আর এসব করতে গিয়ে মানুষ মানুষকে খুন পর্যন্ত করছে।

সততা নেই বলেই অনায়াসে মানুষ মিথ্যা রচনা করতে পারছে। মিথ্যার পাহাড় দিয়ে ঢেকে দিতে পারছে সব অপরাধ। সততা নেই বলে এসব অপরাধ করতে মানুষের বুক কাঁপে না।

আমাদের একজন শার্লক হোমস বা ফেলুদা নেই যে হারিয়ে যাওয়া সততাকে খুঁজে বের করবে। কিন্তু আমরা ভরসা করে পারি আল মামুন বা মুবিনের মতো মানুষদের ওপর। তাদের সংখ্যা বাড়লেই সততা ফিরে পাওয়া যাবে, হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগটির মতো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

ধর্ষণে মেয়ে গর্ভবতী, বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ড

ভারতসহ একসঙ্গে তিন দেশ সামলাবেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত