Ajker Patrika

মুরালির শূন্য বাড়ি আর সাঙ্গাকারার কলেজ

রানা আব্বাস, ক্যান্ডি থেকে
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪: ৫৭
মুরালির শূন্য বাড়ি আর সাঙ্গাকারার কলেজ

পাহাড়ের শহর ক্যান্ডিতে এলে দুই ক্রিকেট কিংবদন্তির নাম অবধারিতভাবে মাথায় ঘুরবে—মুত্তিয়া মুরালিধরন আর কুমার সাঙ্গাকারা। সাবেক দুই লঙ্কান তারকার কেউ-ই অবশ্য ক্যান্ডিতে থাকেন না। তবে তাঁদের পরিবারের কেউ না কেউ নিশ্চয়ই থাকেন এই শহরে।

এশিয়া কাপ কাভার করতে এসে এ কদিনে যাতায়াতের নিয়মিত সঙ্গী হয়ে যাওয়া ক্যান্ডির তামিল টুকটুক চালক অরুণ জানালেন, মুরালির বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা যেতে পারে। গতকাল সকালে তাই ক্যান্ডি শহর থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরের শহরতলি কুন্ডেসালে যাওয়া। জায়গাটা বিখ্যাত হয়ে গেছে মুরালির জন্মভিটার সৌজন্যে।

কুন্ডেসালে আরেকটি প্রতিষ্ঠান বিখ্যাত—লাকিল্যান্ড বিস্কুটস ফ্যাক্টরি, যেটির প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী মুরালির বাবা সিন্নাসামি মুত্তিয়া। ক্যান্ডিতে ক্রিকেট কাভার করতে আসা বিদেশি সাংবাদিকেরা তাঁর সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে আসেন বলে বিষয়টির সঙ্গে ফ্যাক্টরির নিরাপত্তাকর্মীরাও অভ্যস্ত।

কারখানার প্রধান ফটকে থাকা ষাটোর্ধ্ব এক নিরাপত্তাকর্মী তাই প্রথম দর্শনেই জানতে চাইলেন, লাহোরে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের ম্যাচের ফল কী? বাংলাদেশের সুপার ফোর নিশ্চিত হয়েছে জেনে তাঁকে প্রসন্নই মনে হলো। তাঁর চাওয়া ‘বি’ গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কাই উঠুক সুপার ফোরে।

কিন্তু যাঁর সাক্ষাতে আসা, সেই মুরালির বাবা লাকিল্যান্ড বিস্কুটস ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী সিন্নাসামি মুত্তিয়া কোথায়? নিরাপত্তাকর্মী পরামর্শ দিলেন কারখানার পেছনেই তাঁর বাসভবনে যেতে। পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে মুরালিদের বাড়িতে গিয়ে হতাশ হতে হলো। বাড়ি শূন্য। বর্ষীয়ান গৃহপরিচারিকা জানালেন, গতকাল সোমবার সকালে কলম্বোয় গেছেন সিন্নাসামি।

মুরালির মা-বাবা ছাড়া সবাই এখন কলম্বোয় থাকেন। সেখানেই ছেলেদের কাছে গেছেন সিন্নাসামি। গৃহপরিচারিকার আরও একটি তথ্য শুধুই আফসোস বাড়াল। তিনি জানালেন, গত শনিবার মুরালি ক্যান্ডিতেই ছিলেন। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখেছেন পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে বসে।

কুন্ডেসালে মুত্তিয়া মুরালিধরণের সেই বাড়ি। ছবি: লেখকসেদিন মুরালিকে পেলেও যে তিনি একজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতেন, সেটির কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছ থেকে নম্বর জোগাড় করে গতবার একাধিকবার চেষ্টা করেও যেমন ফোনে পাওয়া গেল না। তবে মুরালিদের গৃহপরিচারিকা একটু ক্যান্ডির বাড়িতে প্রবেশের সুযোগ দিলেন।

মুরালিদের জন্ম যে বাড়িতে, সেটি জীর্ণ-বিবর্ণ। পাশেই নতুন ঝা-চকচকে দোতলা বাড়ি। বাড়িতে গৃহকর্তাই যখন নেই, দ্রুত বিদায় নেওয়া ভালো।

মুরালিদের বাড়ি থেকে বের হতেই টুকটুক চালকের প্রশ্ন, এখন কোথায় যাবেন? ঝটপট উত্তর: ট্রিনিটি কলেজ। ১৫০ বছরের পুরোনো এই  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু ক্যান্ডিতে নয়, পুরো শ্রীলঙ্কাতেই বিখ্যাত। গত দুই যুগে এটি একজন ক্রিকেটারের সৌজন্যে বেশি খ্যাতি পেয়েছে—কুমার সাঙ্গাকারা। লঙ্কান কিংবদন্তি এ কলেজেই পড়েছেন।

স্কুল ক্রিকেটে নিজের প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়েছেন। পড়াশোনা আর খেলায় এতটাই চৌকস ছিলেন, স্কুলের ‘সিনিয়র পারফেক্টও (হেড বয়)’ হয়েছিলেন সাঙ্গা। বেস্ট অলরাউন্ড ছাত্র হিসেবে পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সম্মানজনক ‘রাইড স্বর্ণপদক’ পুরস্কার।

সাঙ্গাকারার আরও গল্প শুনতে গতকাল দুপুরে ট্রিনিটি কলেজে যাওয়া। কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল লিওনার্ড এম ডি আলওয়াইস সপ্তাহের প্রথম দিনে এতই ব্যস্ত, গতকাল তাঁর সময় আর মিলল না। সাক্ষাৎকারের জন্য নতুন করে সময় নিতে বললেন। আর খুব জরুরি হলে ই-মেইলে প্রশ্ন পাঠাতে বললেন।

ট্রিনিটি কলেজ সবভাবেই সম্মান জানিয়েছে সাঙ্গাকারাকে। তাদের ওয়েবসাইটে সাবেক লঙ্কান অধিনায়ককে নিয়ে আছে একাধিক নিবন্ধ। কলেজের হোম গ্রাউন্ড আসগিরিয়া স্টেডিয়ামে তাঁকে বিশাল সংবর্ধনা দেওয়ার ঘটনাও আছে।

সাঙ্গাও কলেজকে হৃদয়ের উঁচু আসনেই বসিয়েছেন। সময় পেলে কলেজে আসেন। কলেজে এলে একজন পিয়নকেও যে সম্মান তিনি জানান, ট্রিনিটিয়ানরা তাঁকে শুধু ক্রিকেট কিংবদন্তি হিসেবেই দেখেন না; দেখেন একজন অনুপ্রেরণাদায়ী নিপাট ভদ্রলোক হিসেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত