Ajker Patrika

নূরলদীন

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ১০: ১৪
নূরলদীন

নূরলদীনের কোনো হদিস কেউ করেনি কখনো। হদিস করার মতো তথ্য-উপাত্তও ছিল না। কিন্তু পড়াশোনার খাতিরেই লন্ডনের বিবিসি লাইব্রেরিতে গিয়ে একদিন সৈয়দ শামসুল হক আবিষ্কার করলেন নূরলদীনকে।

বিলেতে সাড়ে ছয় বছর বিবিসিতে কাজ করেছিলেন সৈয়দ হক। সে সময় ভাষাতত্ত্ব আর ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনার আগ্রহ জেগেছিল তাঁর। ইতিহাসের মধ্যে ভারতের ঔপনিবেশিক ইতিহাস, বিশেষ করে বাংলার ইতিহাস। সেখানে মস্কো থেকে প্রকাশিত দুই খণ্ডের ভারতের ইতিহাস পেয়ে গেলেন। দ্বিতীয় খণ্ডে এক জায়গায় দেখলেন লেখা আছে, পলাশীযুদ্ধের মাত্র ১০/১২ বছর পর কোম্পানির দালালদের বিরুদ্ধে একটা আন্দোলন হয়েছিল রংপুরে। রংপুর! শব্দটি পড়ে চমকে উঠলেন সৈয়দ হক। খোঁজ করতে লাগলেন, আর কোথাও এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায় কি না। পেলেন সুপ্রকাশ রায়ের বইয়ে কিছু তথ্য। ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে গিয়ে নথি খুঁজলেন। কিছু নথি পেলেন। দেখলেন, সে সময় কালেক্টর ছিলেন গুডল্যান্ড। তিনি নিজের হাতে যে রিপোর্ট লিখেছেন, তাতে আছে ‘ডেকোইটস’ নামে একটি শব্দ। পাকিস্তানিরাও স্বাধীনতাকামী মানুষের পরিচয় ব্যবহার করতে আরেকটি শব্দ ব্যবহার করত—মিসক্রিয়েন্ট!

কী লিখেছিলেন গুডল্যাড? ডাকাত দলে অর্থাৎ নূরলদীনের দলে মাদ্রাসা, মক্তব, টোলের ছাত্ররা, জেলে, কামার-কুমারেরা যোগ দিয়েছে। দপ করে একাত্তরের একটা সমান্তর ছবি ভেসে উঠল সৈয়দ হকের মাথায়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষ যোগ দিয়েছে স্বাধীনতাযুদ্ধে! এবং দেখা গেল ওয়ারেন হেস্টিংস মার্শাল ল জারি করেছিলেন নূরলদীনের বিদ্রোহের পরপর।

নূরলদীন তখন বঙ্গ প্রদেশের পৌনে তিন কোটি মানুষের মধ্যে ৩৫ হাজার লোকের একটা বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন, এ কথা কালেক্টরই লিখেছেন। সেই মানুষটির সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষকে পরিচিত করে তোলার জন্য সৈয়দ হক বেছে নিলেন মঞ্চকে।

ইতিহাস বলে, নূরলদীন সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন ১৭৮৩ সালে। আর কাকতালীয়ভাবে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা নূরলদীনের সারাজীবন ঢাকার মঞ্চে প্রথম আসে ১৯৮৩ সালে।

সূত্র: হাসান শাহরিয়ার সম্পাদিত থিয়েটারওয়ালা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত