Ajker Patrika

বাজার থেকে বোতলের সয়াবিন তেল উধাও

অরূপ রায়, সাভার
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২২, ১১: ১০
বাজার থেকে বোতলের সয়াবিন তেল উধাও

রাজধানীর পর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার সাভারের নামাবাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে নামাবাজারে খোলা তেলের অভাব নেই। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বোতলজাত সয়াবিনের সংকট নিয়ে ব্যবসায়ী ও ডিলারদের মুখোমুখি করা হলে তাঁরা একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই সপ্তাহ ধরে ডিলারদের কাছ থেকে তাঁরা বোতলজাত সয়াবিন পাচ্ছেন না। ডিলাররা বলছেন, কোম্পানি থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী তাঁরা ব্যবসায়ীদের তেল দিতে পারছেন না। তবে কম হলেও ব্যবসায়ীদের বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করা হচ্ছে।

অপরদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বোতলজাত সয়াবিনের তুলনায় খোলা তেলের দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বোতল থেকে তেল বের করে তা খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করছেন। এ কারণে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট।

গতকাল বৃহস্পতিবার কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত পনেরো দিন ধরে তাঁরা সাভারের নামাবাজারে বোতলজাত সয়াবিন পাচ্ছেন না। খোলা তেল পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকা কেজি দরে, যা বোতলজাত তেলের দামের তুলায় বেশি। ডিলার, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা মিলে বোতলজাত সয়াবিন মজুত অথবা খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা।

সাভার নামাবাজারের মিয়া স্টোরের মালিক মিয়া খলিল বলেন, ‘দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রূপচাঁদা কোম্পানির সয়াবিন তেল দেওয়া হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি এসে কম চাহিদার অন্যান্য পণ্য নেওয়ার শর্তে সয়াবিন তেলের দুই-এক বোতল দিতে সম্মত হন।’

রূপচাঁদা সয়াবিন তেলের সাভারের ডিলার শাহীন এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোম্পানি থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের তেল দিতে পারছেন না তাঁরা। তবে কম হলেও ব্যবসায়ীদের নিয়মিত সয়াবিন তেল সরবরাহ করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ী ও ডিলারের পক্ষ থেকে দুই ধরনের বক্তব্য পেয়ে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শাহীন এন্টারপ্রাইজের মালিক আশরাফুল আলম শাহীনকে মিয়া স্টোরের মালিক মিয়া খলিলের মুখোমুখি করা হয়। এ সময় মিয়া খলিল পনেরো দিন ধরে রূপচাঁদার সয়াবিন তেল না পাওয়ার অভিযোগ করেন। শাহীন এ অভিযোগ অস্বীকার করলে মিয়া খলিল তাঁর কাছে পাঁচ কার্টন বোতলজাত সয়াবিন তেলের চাহিদা দেন। কিন্তু তেল নেই বলে শাহীন তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

নামাবাজারের আজাদ স্টোরের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, গত মাসের প্রথম দিকে তিনি বসুন্ধরা কোম্পানির দুই কার্টন (প্রায় ৪০ লিটার) বোতলজাত তেল পেয়েছিলেন। রূপচাঁদা ও তীরের সয়াবিন তেল পান না প্রায় এক মাস।

রফিকুল ইসলাম আরও জানান, এক মাস পর গত বুধবার রূপচাঁদার বিক্রয় প্রতিনিধি এক কার্টন (২০ লিটার) সয়াবিন তেলের সঙ্গে এক কার্টন রাইস ব্র্যান তেল নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিলে তিনি তা নেননি।

সয়াবিন তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়া ও সংকটের কারণ হিসেবে হাজী জেনারেল স্টোরের মালিক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘অনেকের ধারণা খোলা তেলের তুলনায় বোতলজাত সয়াবিন তেলের মান ভালো। তাই ইদানীং তাঁরা বোতলজাত তেল কিনছেন। অনেকে আবার রমজান সামনে রেখে দাম বাড়ার আশঙ্কায় চাহিদার তুলনায় বেশি তেল কিনছেন। এসব কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে।’

সাভারে তীর ব্র্যান্ডের এজেন্ট গৌতম বণিক জানান, প্রতিদিন তাঁর ৪০০ কার্টন (৭ হাজার ২০০ লিটার) বোতলজাত তেল প্রয়োজন। সেখানে তিন দিনে তিনি পাচ্ছেন ২০০ কার্টন।

পনেরো দিন ধরে তেল পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা, এমন অভিযোগ সম্পর্কে গৌতম বণিক বলেন, ‘সরবরাহ কমে যাওয়ায় আগের মতো সবাইকে তেল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

রূপচাঁদার টেরিটরি ম্যানেজার মো. শাজাহান বলেন, ‘কোম্পানির বোতলজাত তেলের কোনো অভাব নেই। সাভারের বাজার ও গুদামে পর্যাপ্ত তেল রয়েছে।’ কিন্তু গতকাল তাঁর প্রতিনিধির সঙ্গে সরেজমিন গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত