Ajker Patrika

‘মোগো জীবনের দাম নাই, দাম শুধু ইলিশের’

রুদ্র রুহান, বরগুনা
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১০: ৩৬
‘মোগো জীবনের দাম নাই, দাম শুধু ইলিশের’

‘ইলিশ ধইর‍্যা যহন লইয়া আই তহন মোগো একছের দাম। মোরা যহন ডুইব্বা মরি তহন কেউ বাঁচাইতে যায় না। মোগো জীবনের কোনো দামই নাই, দাম শুধু ইলিশের।’

আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানীর জেলে আবদুর রহমান। সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ট্রলারডুবির শিকার হয়ে কোনোমতে বেঁচে ফিরেছেন তিনি। তবে নিখোঁজ রয়েছেন তাঁর ট্রলারের আরও আট জেলে। এ ছাড়া আরেকটি ট্রলারসহ সেটির ১৭ জেলের এখনো খোঁজ মেলেনি। 

১৬ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ জেলেদের অধিকাংশের বাড়ি নলটোনা ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া ও ঢলুয়া ইউনিয়নের মড়খালী গ্রামে। এখন সেখানে চলছে শোকের মাতম। স্বজনেরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছেন, জানতে যাচ্ছেন কী হয়েছে জেলেদের। বেঁচে আছেন, না কি সলিলসমাধি হয়েছে—মিলছে না কোনো উত্তর। 

ট্রলারমালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিখোঁজের পর থেকে আমরা দফায় দফায় ট্রলার নিয়ে জেলেদের খুঁজেছি। কোনো হদিসই মিলছে না। এই জেলেদের খুঁজতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতাই পাচ্ছি না। কেউ আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেননি।’ জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, সিডরের পর প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়েই জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

সমিতির কাছে থাকা তথ্যমতে, এসব ঘূর্ণিঝড়ে শতাধিক জেলে নিহত ও পাঁচ শতাধিক জেলে নিখোঁজ হন। নিখোঁজ জেলেদের অনেকে এখনো ভারতের কারাগারে বন্দী। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে কিংবা ঝড়ের আগে সতর্কতাসংকেত সমুদ্রে জেলেদের কাছে পৌঁছে দিতে বা পরে নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। 

মোস্তফা বলেন, ‘ঝড়ের খবর জেলেদের কাছে পৌঁছে দিতে আমাদের একমাত্র অবলম্বন দুবলায় টেলিটকের একটি টাওয়ার। এই টাওয়ার ঝড়ে অকার্যকর হয়ে পড়লে আর যোগাযোগ করতে পারি না। এ সমস্যা সমাধানে সরকারের নজর দেওয়া এখন সময়ের দাবি।’ 

জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল খালেক বলেন, পাথরঘাটায় একটি আবহাওয়া স্টেশন স্থাপন ও সাগরে নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। একই সঙ্গে ঝড়ের কবলে পড়া জেলেদের দ্রুত উদ্ধার করে তীরে ফিরিয়ে আনতে পাথরঘাটা কোস্ট গার্ডে আধুনিক নৌযান সংযোজন করা অবশ্যই দরকার। এই তিনটি জিনিসের ব্যবস্থা থাকলে জেলেরা নিরাপদে মাছ শিকার করতে পারবেন।

এ বিষয়ে কথা হলে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে জেলেদের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। জেলেদের কাছে সঠিক সময়ে সংকেত পৌঁছানো, তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরিয়ে আনা ও সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা সব সময়ই তৎপর ভূমিকায় থাকি। তারপরও যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা দূর করতে ও জেলেদের দাবির বিষয়টি বিবেচনায় নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত