Ajker Patrika

গাফিলতি ও অনিয়মের তদন্ত হোক

সম্পাদকীয়
গাফিলতি ও অনিয়মের তদন্ত হোক

৬ জুলাই আজকের পত্রিকার ৭ নম্বর পৃষ্ঠায় দুটি খবর ছাপা হয়েছে। একটির শিরোনাম ‘চলাচলের রাস্তা নেই, দুর্ভোগে বাসিন্দারা’, অন্যটির শিরোনাম ‘ঝড়ে ঘরে থাকতে ভয় পান তাঁরা’। প্রথম খবরটি ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈলের, দ্বিতীয়টি রাজশাহীর পুঠিয়ার। দুটি খবরই আশ্রয়ণ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট। আশ্রয়ণ বর্তমান সরকারের একটি অত্যন্ত মানবিক ও জনহিতকর প্রকল্প। যাঁদের ভিটেমাটি নেই, মাথা গোঁজার নিরাপদ আশ্রয় নেই, তাঁদের একটি ঠিকানা করে দেওয়া, মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়াই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

ইতিমধ্যে বেশ কয়েক লাখ মানুষ এই প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না।’ আমরা সরকারের এই কাজের প্রশংসা করি।  

কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে কিছু সমালোচনাও আছে। আশ্রয়ণের জন্য যে জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে, তা খুব চিন্তাভাবনা করে করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন আছে। আবার ঘর বানানোর দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অসাধুতা ও দুর্নীতিপরায়ণতার কারণে কিছু কিছু ঘর অল্প সময়েই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। যে ঘর পেয়ে মানুষের আনন্দিত হওয়ার কথা, সেই ঘর পেয়ে যদি মানুষকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, তাহলে মানুষ তো দোয়ার বদলে বদদোয়া করবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার দক্ষিণ নয়ানপুর গ্রামে মঙ্গল হাজেরা দিঘির পাড়ে দুই সারিতে নির্মাণ করা হয়েছে ১৯টি বাড়ি। বাড়িগুলোতে সংসার সাজিয়ে বসেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের বেশির ভাগই দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। রুজি-রোজগারের জন্য তাঁদের রিকশা-ভ্যান নিয়ে প্রতিদিনই বেরিয়ে পড়তে হয়।

কিন্তু আশ্রয়ণের এলাকা থেকে বের হতে তাঁদের বেশ বেগ পেতে হয়। প্রকল্পটি থেকে বের হওয়ার জন্য কোনো রাস্তা না থাকায় মানুষের জমির আইল দিয়ে চলাচল করতে হয়। ওই আইল বৃষ্টির পানিতে মাঝেমধ্যে ডুবে যায়। তখন চলাচলে খুবই সমস্যা হয়। অনেক সময় রিকশা-ভ্যান বের করা যায় না।

আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘর করে দেওয়া হয়েছে প্রায় তিন বছর হলো, কিন্তু সরকার এখানে চলাচলের রাস্তা দেয়নি। রাস্তার জন্য ইউএনও, এসি ল্যান্ড ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে একাধিকবার গিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে কাঁধে করে প্রায় ৩০০ ফুট বয়ে তারপর রাস্তায় নিয়ে গাড়িতে তুলতে হয়। ছেলেমেয়েরা মানুষের জমির ওপর দিয়ে স্কুল-কলেজে যায়।

অন্যদিকে রাজশাহীর পুঠিয়ার তালুকগাছি ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একটু ঝড়-তুফান শুরু হলেই ঘরের টিন খুলে যায়। এ ছাড়া নির্মাণের এক মাস না যেতেই ঘরের সব কাঠ ঘুণপোকায় খেয়ে ফেলছে। এ জন্য ভয়ে ভয়ে থাকেন ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার’ আশ্রয়ণের ঘরের বাসিন্দারা।

সারা শরীর উদোম রেখে লজ্জা ঢাকার জন্য হাতে রুমাল দেওয়ার মতো তামাশা না করে, উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার না করে, সেগুলো আমলে নিয়ে মানুষ যাতে স্বস্তি ও নিরাপদে থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হোক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত