Ajker Patrika

স্নেহের ছোঁয়া

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১: ২৫
স্নেহের ছোঁয়া

শ্রীরামপুর শহরে ছিল কবি সম্মেলন। সে সময় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখালেখি কেবল ছাপা হওয়া শুরু করেছে। তিনিও গেছেন কবিতা পড়তে। সেই সভার সভাপতিত্ব করবেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। কল্লোল যুগের ডাকসাইটে কবি। সভাপতির জন্য সবাই অপেক্ষা করছে, কিন্তু তিনি এসে পৌঁছাননি। তখন সভাপতির আশা ছেড়ে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরুকরে দেওয়া হলো। শ্রীরামপুর লাইব্রেরি হলটি দর্শকে পরিপূর্ণ। সম্ভবত প্রেমেন্দ্র মিত্রের নাম শুনেই এত মানুষ এসে হাজির হয়েছে।

বাইরে প্রবল বৃষ্টি। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ঘণ্টা দেড়েক পরে কবিতা পড়ার জন্য সুনীলের ডাক পড়ল। সুনীল সবে কবিতা পড়তে শুরু করেছেন, তখন বাইরে শোনা গেল গোলমাল। প্রেমেন্দ্র মিত্র এসেছেন কলকাতা থেকে সোজা ট্যাক্সিতে। কে আর সুনীলের কবিতা শুনবে। প্রেমেন্দ্র মিত্রকে মঞ্চে আনা হলো। চলতে লাগল কথাবার্তা। সুনীল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মঞ্চে। তারপর একসময় এই তরুণ কবি রেগেমেগে সরে এলেন মাইকের সামনে থেকে। কথাবার্তা একটু কমলে নতুন আরেকজন কবির নাম ঘোষণা করা হলো। কিন্তু প্রেমেন্দ্র মিত্র থামালেন। তিনি সুনীলকে চিনতেন না, পরিচয় হয়নি আগে, নাম জানার কথাও নয়। কিন্তু যে কবির নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁর জায়গায় প্রেমেন্দ্র মিত্র আঙুল তুলে সুনীলকে দেখিয়ে দিলেন। মঞ্চে ওঠার সময় এই তরুণ কবির ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া চেহারাটা নিশ্চয়ই তিনি দেখেছিলেন।

জোরে বৃষ্টি না পড়লে ততক্ষণে সুনীল হয়তো বেরিয়ে পড়তেন হল ছেড়ে। প্রেমেন্দ্র মিত্র অনুভব করেছিলেন তরুণ কবির অভিমান। তাই তিনি সভাপতির আসন ছেড়ে নেমে এসে সুনীলের হাত ধরে বলেছিলেন, ‘আমার অনুরোধে আরেকবার পড়ো।’

এত বড় কবির সামনে ঔদ্ধত্য দেখানো ঠিক নয়। সুনীল পড়লেন একটি কবিতা। প্রেমেন্দ্র মিত্র কবিতাটির পাণ্ডুলিপি চেয়ে নিলেন এবং ফেরার সময় জোর করেই নিজের ট্যাক্সিতে উঠিয়ে নিলেন তরুণ এই কবিকে।

এরপর সারা জীবনের জন্য প্রেমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে একটা যোগাযোগের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল সুনীলের। 

সূত্র: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অর্ধেক জীবন, পৃষ্ঠা ১৯২-১৯৩

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত