Ajker Patrika

বেড়ে ওঠা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২২, ১৫: ২৪
বেড়ে ওঠা

১৯৫২ সালের ডিসেম্বর মাসে জামিলুর রেজা চৌধুরীকে সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে নিয়ে গেলেন। হেডস্যার তাঁকে ভর্তি করলেন ক্লাস সেভেনে। জিজ্ঞেস করলেন, ‘জন্মতারিখ?’ ‘১৯৪৩ সালের ১৫ নভেম্বর।’

হেডস্যার হিসাব করে বললেন, ‘নাহ, ম্যাট্রিকের সময় তো ন্যূনতম ১৪ বছর হবে না। ঠিক আছে, আমি সালটা ১৯৪২ লিখছি।’

নিজের বয়সের চেয়ে এক বছর বেড়ে গেল জামিলুর রেজা চৌধুরীর। এই স্কুলেই কাটিয়ে দিলেন পরের চারটি বছর।

১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করলেন তিনি। মেধাতালিকায় প্রথম দশের মধ্যে ছিলেন তিনি। স্কুলে কিন্তু কোনো পরীক্ষাতেই ফার্স্ট হননি তিনি। কলেজজীবনেও তা-ই। তবে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (তখন তা আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ) দ্বিতীয় বর্ষ থেকে সব সময় ফার্স্ট হয়ে এসেছেন।

ফার্স্ট হওয়ার জন্য তিনি কি দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন? একেবারেই না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য যতটা সময় দিয়েছেন, খেলাধুলায় তার চেয়ে কম সময় দেননি। ক্রিকেট, হকি, টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে খেলেছেন তিনি।

এত খেলাধুলা করেও কীভাবে তিনি চৌকস বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠলেন? ব্যাপারটা খুব সোজা। ক্লাস শেষ হওয়ার পর চলে যেতেন মাঠে, সেখানে খেলতেন। সন্ধ্যার কাছাকাছি সময়ে হোস্টেলের ক্যানটিনে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে গল্প-গুজব করতেন। এ সময় যে ছাত্রদের পড়া বুঝতে কষ্ট হতো, তাঁরা তাঁকে ডেকে নিয়ে যেতেন। জামিলুর রেজা চৌধুরী তাঁদের পড়া বুঝিয়ে দিতেন। তাঁদের সঙ্গে বসে সমস্যাগুলোর সমাধান করতেন। ফলে যা দাঁড়াত, অন্যকে বোঝাতে বোঝাতেই অর্ধেক পড়া হয়ে যেত তাঁর। এরপর বাকি পড়া নিজে নিজে তৈরি করে নিতেন।

পাঠ্যবইয়ের বাইরে ভ্রমণকাহিনি, আত্মজীবনী, উপন্যাসও পড়তেন তিনি। ডিটেকটিভ বইয়েও আকর্ষণ ছিল একসময়। ক্লাসিক্যাল সাহিত্য এবং শেক্‌সপিয়ার ছিল খুব আগ্রহের জায়গা। কলেজে এমন এক বন্ধুকে পেলেন, যার বাড়িতে ছিল সুন্দর এক লাইব্রেরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে (তখন ছিল কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি) গিয়ে পড়ে থাকতেন। এভাবেই তিনি হয়ে উঠলেন সবজান্তা এক খাঁটি মানুষ।

সূত্র: বিধান চন্দ্র পাল সম্পাদিত সেতুবন্ধন, পৃষ্ঠা ৩৩১-৩৩৬ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত