Ajker Patrika

‘তিন মাস মাছবাজারে যাই না’

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
‘তিন মাস মাছবাজারে যাই না’

চল্লিশোর্ধ্ব শেখ সিদ্দিক। পেশায় চা-বিক্রেতা। ৩০ বছর ধরে রাজবাড়ী-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় চা বিক্রি করেন। ১ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় ছোট্ট একটি দোকানের আয়ে চলে তাঁর সংসার। পরিবারের সদস্যসংখ্যা সাত। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে তিনি মাছবাজারে যান না। কারণ, সেতু চালুর পর থেকে এই রুটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ নেই। যে কারণে তাঁর আয় কমে গেছে। এখন সারা দিনে যে কয় টাকা আয় হয়, তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে দুবেলা খাবারের জোগান দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে তাঁর। শুধু চা-বিক্রেতা শেখ সিদ্দিকই নন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অর্থসংকটে পড়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট একেবারেই ফাঁকা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে যেসব যানবাহন আসছে, কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ফেরিতে উঠে গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। এদিকে ঘাটকে কেন্দ্র করে যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল, তার অধিকাংশ বন্ধ রয়েছে। অনেক হোটেল ব্যবসায়ী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। বন্ধ থাকা চেয়ার-টেবিলগুলোর ওপর ধুলার আবরণ পড়ে রয়েছে। যে দোকানপাট খোলা আছে, সেগুলোতেও নেই বেচাকেনা।

শেখ সিদ্দিক বলেন, ‘খুবই কষ্টে আছি। ছোট একটা দোকানের আয়ে এখন আর সংসার চলে না। কয়েক মাস আগে এনজিও থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলাম; কিন্তু বর্তমানে সেই টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে দোকানে বিক্রি নেই, যা হয় চাল আর সবজি কিনতেই টাকা শেষ। যে কারণে তিন মাস মাছবাজারে যেতে পারি নাই।’

আরেক ব্যবসায়ী কামরুল বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর আগে দোকানে ভালো বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হয় চার ভাগের এক ভাগ। যে টাকা বিক্রি হয় তা দিয়ে দোকান ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

হকার সালাম মিয়া বলেন, ‘১০ বছর ধরে লঞ্চ, ফেরিতে ঝালমুড়ি বিক্রি করি। পদ্মা সেতু চালুর আগে দিনে ৬০০-৭০০ টাকা বিক্রি হতো। তা দিয়ে কোনোমতো সংসার চালিয়ে নিতে পেরেছি; কিন্তু এখন তা পারি না। সেতু চালুর পর থেকে এই ঘাটে যাত্রীর চাপ নেই। যে কারণে দিনে দুই থেকে তিন শ টাকার বেশি বিক্রি হয় না।’

হোটেল ব্যবসায়ী টিটু শেখ বলেন, ‘১৫ বছর ধরে খাবার হোটেলের ব্যবসা করে আসছেন। তাঁর হোটেলে ১৪ জন কর্মচারী কাজ করেন। তাদের মাসে বেতন দিতে হয় দেড় লাখ, বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় ১৩ হাজার, হোটেল ভাড়াসহ ২ লাখ টাকা খরচ হয়। বর্তমানে ব্যবসার যে অবস্থা, তাতে লোকসান হচ্ছে।’

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগ দৌলতদিয়া শাখার সভাপতি শেখ তোফাজ্জেল হোসেন তপু বলেন, ‘দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হোটেল ব্যবসায়ী, হকাররা খুব কষ্টের মধ্যে আছেন। এঁদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ নদীভাঙনের শিকার। এসব মানুষকে বাঁচাতে হলে নদীশাসন করতে হবে। সে সঙ্গে আধুনিক নৌবন্দর করলে এই এলাকার মানুষদের কর্মসংস্থান হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত