Ajker Patrika

সভাপতি বাবা

সম্পাদকীয়
সভাপতি বাবা

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের গাগলাজুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে মনে হয় মধু আছে। সেই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হলে হয়তো মান বাড়ে। আর বাড়ে ক্ষমতা। এই ক্ষমতার জন্যই নিজ সন্তানকে নিয়ে যা ইচ্ছে তা-ই করার অধিকারও জন্মে যায় কারও কারও।

যে কাহিনিটির খবর উঠেছে আজকের পত্রিকার ময়মনসিংহ সংস্করণে, তা পড়ে হাসতে হবে কি কাঁদতে হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও বেগ পেতে হয়। কারণ, স্রেফ স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য কেউ নিজ সন্তানকে একাধিক স্কুলে ভর্তি করাতে পারে, এটা প্রায় নজিরবিহীন ঘটনা। ঘটনা সাধারণ না হলেও ঘটেছে যেহেতু, সেহেতু এ বিষয়ে কয়েকটি কথা বলাই যায়।

পাঠককে খবরটার সঙ্গে একটু পরিচয় করিয়ে দেওয়া দরকার। মোহাম্মদ শফিউল কবিরের সন্তান পড়ছিল দৌলতপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে।

আবার একই সময় সে পড়ছিল ন্যাশনাল প্রি-ক্যাডেট স্কুলে। কিন্তু বাবাকে তো স্কুল প্রাঙ্গণে ক্ষমতাবান হয়ে উঠতে হবে। কোথায় সেই ক্ষমতার ঠিকানা? এই দুটো স্কুলে তো সেটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেটাই খুঁজে পেয়েছেন ভদ্রলোক নতুন এক স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করে। আর এ জন্য তিনি দুটো স্কুলের একটি স্কুল থেকে ছেলের জন্য ছাড়পত্র নেন এবং ছেলেকে ভর্তি করান নিজ গ্রামের স্কুলে। ছেলে এখানে ভর্তি হওয়ায় এই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় বাবার। গত এপ্রিল মাস থেকে তিনি এই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি।

ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হলে প্রতিপত্তি কেন বাড়ে, কতটা বাড়ে, সে আলোচনায় আমরা যাব না। ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন, এ ধরনের কমিটির সভাপতি হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুবিধা অর্জন করা যায়। শুধু কি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হলেই ভাগ্য খুলে যায়? স্কুলের অভিভাবক সদস্য হলেও যে সুযোগ কাজে লাগানো যায়, সেটাও কি আমরা দেখতে পাই না? বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার স্বনামধন্য স্কুলগুলো যখন অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের পোস্টার-ফেস্টুনে ভরে যায়, তখন কি সেটা জাতীয় নির্বাচনের আমেজ নিয়ে আসে না? এই নির্বাচনে এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে টাকার খেলার খবর কি একেবারে অজানা আমাদের?

যে শিশুটিকে স্কুলে স্কুলে ফেরি করা হয়েছে, তার নাম প্রকাশ করা হলো না। বাবার অন্যায়ে সে শুধুই একজন শিকার—এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।

প্রশ্নটি তুলতে চাই মূলত নৈতিকতা নিয়ে। এ রকম একটি অন্যায় করার পরও কেন কেউ লজ্জিত হয় না? বরং মনে করে, অনৈতিক হওয়ার অধিকার তার আছে। সমাজে প্রতিপত্তি থাকায় কেউ তাদের ঘাঁটায় না। অন্যায় করার পর কোথাও কি তাদের তেমন শাস্তির মুখোমুখি হতে দেখা যায়? অন্যায় করে শাস্তি না পেলে এ ধরনের অনৈতিকতার চাষবাস বাড়তেই থাকবে। তখন আগাছাকেই ফসল বলে ভ্রম হবে। আগাছারাই তখন অন্যকে শাসন করে বলবে—আমাকে দেখ, আমিই মহিরুহ।

আগাছাদের আগাছা হিসেবে দেখার চোখ থাকা দরকার। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

ধর্ষণে মেয়ে গর্ভবতী, বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ড

ভারতসহ একসঙ্গে তিন দেশ সামলাবেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত