Ajker Patrika

ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বরের রোগী

রাসেল আহমেদ, তেরখাদা
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ৩৮
ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বরের রোগী

দেশে একদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চলছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাও। খুলনার তেরখাদায় এখন ঘরে ঘরে মানুষের মধ্যে রয়েছে সর্দি-কাশি, জ্বর ও গলা ব্যথার উপসর্গ।

ফলে কোনটি করোনা আর কোনটি মৌসুমি উপসর্গ তা বুঝতে পারছেন না অনেকেই। হাড় কাঁপানো শীতের কারণেই মূলত এসব রোগী বেড়ে গেছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তেরখাদা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে এসব রোগীর সংখ্যা।

হাসপাতালে ডাক্তারদের কক্ষের সামনে দীর্ঘ লাইন, বসার কোন জায়গা নেই। তেরখাদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা উপজেলার ইখড়ি এলাকার রিংকি খাতুন বলেন, কয়েক দিন ধরে কাশি হচ্ছে, রাতে ঘুমাইতে পারি না, নাক দিয়েও পানি পড়ে। এ কারণে ডাক্তারদের কাছে এসেছি। দেখি তারা কি বলে।

সদরের পশ্চিমপাড়া এলাকার গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, কয়েক দিনের কুয়াশা এবং প্রচণ্ড ঠান্ডায় গলাব্যথা ও কাশি হচ্ছে। তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছি।

এ ছাড়া ভাইরাসে শিশু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকেরা। শিশুদের কোল্ড ডায়রিয়া ও রোটা ভাইরাস দেখা দিয়েছে। বয়স্করা অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে পারলেও রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের ঘন ঘন পানির মত পাতলা পায়খানা ও বমি করতে দেখা যায়। এসব কারণে আক্রান্ত শিশুরা অল্প সময়ের ব্যবধানে বেশি মাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়েছে।

গত কয়েক দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু রোগীর ভর্তি বেড়েছে। উপজেলা জয়সেনা এলাকার রুমা খাতুন বলেন, তার ১৮ মাসের শিশু গত দুই তিন দিন আগে হঠাৎ পানির মত পাতলা পায়খানা করছিল। অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসি। কিন্তু তার পায়খানা কমছে না। ঘন ঘন বমির সঙ্গে পাতলা পায়খানা হওয়ায় সে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

গত ১৫ দিনে উপজেলার অসংখ্য মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে তারা করোনা পরীক্ষা করতে নারাজ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার গ্রামগুলোতে সর্দি, জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে দ্বারস্থ হচ্ছেন রোগী। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ করোনার পরীক্ষা করতে রাজি হচ্ছে না। তবে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তেরখাদায় ৪৫ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষায় ২৬ জন শনাক্ত হয়েছে। যাদের পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে।

সর্দি জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিক ও পল্লি শিক্ষকের কাছে নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। উপজেলা সদরের কাটেংগা মাজারের মৌসুমি ফার্মেসির মালিক ডা. মোশারেফ হোসেন জানান, গত দুই এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রতিদিনই প্রায় ১০ / ১৫ জন সর্দি-জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে উপজেলায় প্রায় ৬০ ভাগ পরিবারে কোনো না কোনো মানুষ সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আসাদুজ্জামান উপজেলায় গ্রামগুলোর ঘরে ঘরে সর্দি জ্বরের আক্রান্ত হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শীতের কারণে ঠান্ডা, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা রোগী বেড়ে গেছে। হাসপাতালে আগত সব রোগীদের সেবার মান বজায় রেখে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে আমরা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, সর্দি জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। উপজেলাতে আগের তুলনায় করোনা পরীক্ষা বেড়েছে। তবে বেশির ভাগ সর্দি জ্বরের রোগী স্থানীয়ভাবে পল্লি চিকিৎসকের সহায়তায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ জানান, যেহেতু একই সঙ্গে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথাসহ মৌসুমি বিভিন্ন রোগের উপসর্গ ছড়িয়েছে, আবার করোনা সংক্রমণও বাড়ছে। ফলে উপসর্গ হলেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত