Ajker Patrika

বিলের দখল থাক জেলেদের

সম্পাদকীয়
বিলের দখল থাক জেলেদের

একসময় দেশের খাল-বিল, নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়, পুকুরসহ সর্বত্র মাছ সহজে পাওয়া যেত। এ কারণে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ কথাটির চল ছিল। তবে দিন দিন প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল মাছের বিচরণক্ষেত্রগুলো ধ্বংসের পথে। সেই সঙ্গে আছে জলমহাল বা বিল নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের আধিপত্য বিস্তারের ব্যাপার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দিন দিন মাছের চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলো সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাছের অভাবে পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে জেলে সম্প্রদায়।

২০ নভেম্বর আজকের পত্রিকায় বিল দখলবিষয়ক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার রণচণ্ডী ইউনিয়নের বাফলা বিল ইজারা নিয়ে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের দুটি সমিতির সদস্যরা মাছ চাষ করে আসছিলেন। পাশাপাশি এই বিলে মাছ ধরে গ্রামের অনেক মানুষও জীবিকা নির্ভর করে থাকে। তবে এলাকার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ভুয়া কাগজ তৈরি করে বিলটি দখলের ষড়যন্ত্র করছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। অভিযুক্ত ব্যক্তি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অডিট সুপার ছিলেন। সে কারণে তিনি বিলের মালিক সাজার কাগজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি ঘেরের বেড়া তুলে দিয়ে মাছ বের করে দিয়েছেন, বিষাক্ত ওষুধ দিয়ে মাছ মেরে ফেলেছেন এবং জেলেদের কাছে চাঁদাও দাবি করেছেন।

তাই বিলের দখল রুখতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী। বিলের পাশে ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে গ্রামের কয়েক শ নারী-পুরুষ অংশ নেন।

খাসজমি বা জলাশয় দখলের ঘটনা দেশে নতুন ঘটেছে, তা নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হল, ফুটপাত, নদী, সাগর, চর, বিল, পুকুর দখলসহ নানা ধরনের দখলদারির খবর আজকাল প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে থাকে। দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রায় ক্ষেত্রেই হয় না বলে তাদের দাপট না কমে বরং বাড়ে।

‘সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি-২০০৯’ করেছে সরকার। এতে বলা হয়েছে, ‘জাল যার জলা তার’। এই নীতিমালায় প্রকৃত মৎস্যজীবীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যিনি প্রাকৃতিক উৎস হতে মাছ শিকার এবং বিক্রয় করেই প্রধানত জীবিকা নির্বাহ করেন, তিনি প্রকৃত মৎস্যজীবী বলে গণ্য হবেন।’ এই মৎস্যজীবীদের নিয়ে গঠিত সমিতির নামে জলমহালের বন্দোবস্ত দেওয়া হবে। তবে কোনো সমিতিতে যদি প্রকৃত মৎস্যজীবী কেউ থাকেন, তবে ওই সমিতি সরকারি জলমহাল বন্দোবস্ত পাওয়ার যোগ্য হবে না।

সরকারি এই নীতি অনুযায়ী, নীলফামারীর বাফলা বিল বন্দোবস্ত পাওয়া ও মাছ ধরার অধিকার প্রকৃত জেলেদের। কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি অতীতের রাজা-বাদশাহর গল্প বলে এই বিলের মালিকানা দাবি করলেই তার অনুকূলে অবস্থান নেওয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই। প্রকৃত জেলেরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল বলেই রাষ্ট্রের উচিত তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত, বাফলা বিলের প্রকৃত অবস্থা জেনে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যে বিলের সঙ্গে শত শত মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত, সেই বিলের দখল আসল জেলেদের হাতে ছেড়ে দেওয়াই যৌক্তিক হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

ধর্ষণে মেয়ে গর্ভবতী, বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ড

ভারতসহ একসঙ্গে তিন দেশ সামলাবেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত