Ajker Patrika

পীরসাহেব

গাজীউল হক
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯: ০৪
পীরসাহেব

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের কথা বলতে গেলে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের প্রতিবাদের কথা শুরুতেই বলতে হবে। ঢাকায় সেই সাধারণ ধর্মঘট সফল হয়েছিল। শওকত আলী, শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদসহ অনেকেই সেদিন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

সেই আন্দোলন শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ঢাকার বাইরেও হয়েছিল। অন্যান্য শহরের মতো বগুড়া শহরেও ছাত্ররা মিছিল বের করেন। সেই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বগুড়া কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।

ব্যাপারটা ছিল এ রকম। কলেজছাত্র গাজীউল হক ছিলেন সেই মিছিলে। মিছিলটি কলেজ থেকে বের হয়ে বগুড়া শহরের দিকে যাচ্ছিল। উল্টো পথ ধরে রিকশায় করে কলেজে যাচ্ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।

ছাত্ররা অধ্যক্ষকে গিয়ে ধরলেন মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রিকশা থেকে নামলেন। মিছিলের সবাই হর্ষধ্বনি দিয়ে উঠলেন এবং করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দিত করলেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বললেন, ‘মানে কি যে আঁ, আমাকে কী করতে হবে?’

গাজীউল হক বললেন, ‘স্যার, আপনাকে মিছিলে নেতৃত্ব দিতে হবে, এটা আমাদের দাবি।’

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হাসলেন। ‘মানে কি যে আঁ, পীরসাহেব, তাহলে তুমি আমার বোঝাটা নাও, আমি তোমার বোঝাটা নিলুম।’

গাজীউল হকের বাবা পীরসাহেব ছিলেন, তাই মাঝে মাঝে ঠাট্টা করে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ গাজীউল হককে পীরসাহেব বলে ডাকতেন। আর ‘আঁ’ বলা ছিল তাঁর অভ্যাসগত।

কলেজের অধ্যক্ষ মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ায় ছাত্ররা দারুণ রকম উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সেদিন স্কুল ময়দানে যে সভা হয়েছিল, তার সভাপতিও হয়েছিলেন।

সভাপতি হয়েছিলেন গাজীউল হকও। তবে সেটা ১৯৫২ সালে। একুশে ফেব্রুয়ারি আমতলার সেই ঐতিহাসিক সমাবেশে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন গাজীউল হক। সভাপতির ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে হবে।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা থেকে ১০ জন মিছিল বের হয়েছিল। সৃষ্টি হয়েছিল এক অভূতপূর্ব ইতিহাসের।

সূত্র: গাজীউল হক, একুশের সংকলন ৮০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত