Ajker Patrika

বাঙালির কবি

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৪ মে ২০২২, ১০: ২৩
বাঙালির কবি

মধ্যযুগের বাংলা পুঁথিসাহিত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল শিক্ষা-দীক্ষায় অগ্রসর শ্রেণি, বিশেষ করে হিন্দু ভদ্রশ্রেণি। কিন্তু বাংলার মুসলিম সমাজ এই ঐতিহ্যকে ত্যাগ করেনি। ফলে বাংলার মুসলমান সাহিত্যিকদের লেখায় রয়ে গেছে তার প্রকাশ। সেই যুগে চোখে যা দেখি, তার চেয়ে ইউরোপীয় শিক্ষায় যা পেয়েছি, তা হয়ে উঠেছিল অনেক বেশি সত্য।

আবহমান পল্লির ছবি ফুটে উঠেছিল জসীমউদ্‌দীনের লেখায়। এ জন্যই দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘এই পল্লিদৃশ্য আমাদের চোখের সামনে ছিল। এখনো হয়তো কিছু আছে কিন্তু এই সকল হারাইয়া ফেলিয়াছিলাম। এই হারানো জিনিস নতুন করিয়ে পাওয়ার যে আনন্দ কবি জসীমউদ্‌দীন তাহা আমাদের দিয়াছেন।’

জসীমউদ্‌দীনের বাবার চাচা দানু মোল্লা ছিলেন অন্ধ। তিনি নানা ধরনের কেচ্ছা-কাহিনি জানতেন। দানু মোল্লার কাছে গিয়ে জসীমউদ্‌দীন বলতেন, ‘দাদা, কেচ্ছা কও।’ দানু মোল্লা মেলে ধরতেন তাঁর কেচ্ছার পৃথিবী। সরিতুল্লা হাজির কথাও বলেছেন জসীমউদ্‌দীন, যিনি অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ছিলেন না। কিন্তু তাঁর সাধ ছিল নিজে নিজে সোনাভানের পুঁথি পড়ার। জসীমউদ্‌দীন তাঁকে পড়ালেখা শেখালেন। সরিতুল্লা হাজি নিজে নিজে পুঁথি পড়া শিখলেন।

হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব দেখেছেন জসীমউদ্‌দীন। কিন্তু সে সময় সমাজে এক ধর্মের সমালোচনা অন্য ধর্মের লোকে করলেও তা নিয়ে কৌতুক হতো, কেউ কারও ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত না। কবির জন্মস্থান ছিল ফরিদপুর। এ অঞ্চলটি ছিল ফরায়েজি আন্দোলনের ঘাঁটি। কিন্তু হিন্দু জমিদারের বাড়িতে মুসলমান প্রজারা পূজার সময় যাত্রাগানের আসরে ভিড় জমাত, সেই দর্শকের তালিকায় ছিলেন জসীমউদ্‌দীনও।

হিন্দু-মুসলমান সবাইকে দেখেছেন জসীমউদ্‌দীন। তারপর যা লিখেছেন, তা হয়ে উঠেছে সবার সাহিত্য। কালিদাস রায় এ কারণেই লিখেছেন. ‘যতীন্দ্রমোহন এ কুমুদরঞ্জন বঙ্গের পল্লী প্রকৃতিকে দেখিয়াছেন হিন্দুর চোখে। শ্রীমান জসীমউদ্‌দীন তাহাকে বাঙালির চোখে দেখিয়াছেন, অর্থাৎ হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের দৃষ্টিতে দেখিয়াছেন।’

সূত্র: জাহিরুল হাসান, জসীমউদ্‌দীন জন্মশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ, পৃষ্ঠা ৫১০-৫১২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত