Ajker Patrika

জলে বদ্ধ পরিকল্পনা!

সম্পাদকীয়
জলে বদ্ধ পরিকল্পনা!

ঢাকা শহরের উন্নয়ন হয়েছে। দেখেই মন জুড়িয়ে যায়। তবে মনটা বিমর্ষ হয়ে পড়ে যখন বোঝা যায় যে এই উন্নয়ন পরিকল্পনামাফিক হয়নি। নবনির্মিত এক্সপ্রেসওয়ের কথাই  ধরুন। উড়াল দিয়ে অনেকটা পথ খুব কম সময়ে পাড়ি দিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান ভেবে নিলেন। অথচ উড়ালপথটা শেষ হলেই বিতিকিচ্ছি একটা জ্যামের মধ্যে পড়ে গেলেন। মনে করতে পারেন, তথাকথিত উন্নয়নকাজ এখানে এমনভাবেই চলে যেন গার্ডারচাপায় মানুষের মৃত্যু হয়। শতভাগ বিদ্যুতের রাজধানী বৈদ্যুতিক তার দিয়ে ছেয়ে আছে। কিন্তু জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে যখন সেই তার বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেয়, তখন তা সাত বছরের একটা শিশুকেও রেহাই দেয় না। তার বাবা-মা কোন ছার! তাদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দেওয়া টগবগে যুবককেও তো চেনে না সেই বৈদ্যুতিক তার।

আষাঢ়-শ্রাবণের বৃষ্টিতে ঢাকায় তেমন কোনো জলাবদ্ধতা হয়নি বলে সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র হয়তো নিজেদের চৌকস ভাবছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার আশ্বিনের ৬ ঘণ্টার বৃষ্টির যে রূপ দেখেছে নগরবাসী তাতে মেয়রদের পরিকল্পনা নিয়ে সন্দেহ না করে উপায় আছে? পুরো রাজধানী তলিয়ে গেছে পানির নিচে। অনেক জায়গার পানি পরদিন পর্যন্ত নামেনি। এই জলাবদ্ধতায় বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ গেল একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের। সেদিনের জলাবদ্ধতা যে জ্যামের জন্ম দিয়েছিল তাতে অনেকেরই কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরতে লেগেছে প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। নিউমার্কেট থেকে শুরু করে গলির মুদিদোকানের মালামালও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পানিতে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা দশা হয়েছে সম্প্রতি আগুনে পুড়ে যাওয়া কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের।

নগর নির্মাণের পরিকল্পনা কতটা টেকসই হতে হয়, তা বোঝার জন্য রকেটবিজ্ঞানী এমনকি নগরবিদ হওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। তবে প্রয়োজন পড়ে নগরবিদদের যথাযথ পরিকল্পনার। নগর কর্তৃপক্ষ কি নগরবিদদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে? ৬ ঘণ্টা বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে যখন ২০ ঘণ্টায়ও তা নামে না, তখন এর দায় কি শুধুই নগরবাসীর? নগর রক্ষকেরা হয়তো বাসিন্দাদের ওপর দোষ দেন যে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় কেন এত মানুষ আসে, কেন তারা নালা-নর্দমায় প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলে? কিন্তু তাঁরা কি ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণের কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন? তাঁরা কি নালা-নর্দমাগুলো যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ বা পরিষ্কার করেন কিংবা নগরবাসীর ওপর এমন কোনো নিয়ম প্রয়োগ করেন যেন এই প্লাস্টিক পণ্য যেখানে-সেখানে না ফেলা হয়? এর আগে তো প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। কোনোভাবেই নগর কর্তৃপক্ষ এসব দায় এড়াতে পারে না।

অনেকে অভিযোগ করছেন, শহরের খাল বা জলাশয়গুলো নানাভাবে দখল হয়ে যায়, সেগুলো ভরাট হয়ে যায়, সেখানে গড়ে ওঠে ভবন। তাই বৃষ্টি হলে পানি কোনো জলাশয়ে গিয়ে পড়ে না। কৃত্রিম পানি নিষ্কাশনব্যবস্থাও তখন দুর্বল হয়ে পড়ে। পানি জমে রাস্তাতেই। সেই পানিতে মনে হয় নগরের সব পরিকল্পনাও আটকে যায়!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত