Ajker Patrika

পরীক্ষা!

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১২ জুন ২০২২, ১৬: ০৭
পরীক্ষা!

সুনির্মল বসুর ছেলেবেলাটা কেটেছিল গিরিডিতে। শহরটির নাম শুনলেই প্রফেসর শঙ্কুর নাম মনে পড়ে যাবে। সত্যজিৎ রায়ের দারুণ যে দুজন নায়ক আছেন, তাঁদের মধ্যে ফেলুদা বাদে যিনি থাকেন, তিনিই প্রফেসর শঙ্কু। সেই শঙ্কুর অস্তিত্ব আদতে ছিল না, কিন্তু সুনির্মল বসু যে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছেন লেখক হিসেবে, সে কথা তো সবারই জানা।

সুনির্মল বসু পরীক্ষা দিয়েছেন। শিগগিরই পরীক্ষার ফল বের হবে। ফলের খোঁজে অনেকেই ডাকঘরে যায়। সেখানে কিছু নতুন খবর পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। একদিন পাটনা থেকে একটি ছেলের নামে চিঠি এল। ছেলেটি চেঁচিয়ে উঠল, ‘হুররে, আমাদের পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে, আমি প্রথম বিভাগে পাস করেছি!’

সুনির্মলরা ছেলেটিকে ঘিরে ফেলল। গিরিডি স্কুল থেকে যারা পাস করেছে, তাদের সবার নাম ছিল সেই চিঠিতে। শোনা গেল, গিরিডি স্কুল থেকে সবসুদ্ধ পাস করেছে ২১ জন, তাদের মধ্যে ৯ জন প্রথম বিভাগে, ৭ জন দ্বিতীয় বিভাগে, আর ৫ জন তৃতীয় বিভাগে পাস করেছে। অনেক কষ্টে চিঠিটা হাতে পেয়ে সুনির্মল দেখলেন, প্রথম বিভাগ পাওয়া ৯ জনের মধ্যে তাঁর নামও আছে। তিনি সাইকেলে করে রুদ্ধশ্বাসে ছুটলেন বাড়ির দিকে। পথে বন্ধু ছোটুয়ার সঙ্গে দেখা। সুনির্মল সাইকেল চালাতে চালাতেই বললেন, ‘ছোটুয়া..., ফার্স্ট ডিভিশন।’ ছোটুয়া ‘আরে ইয়ার’ বলে কথা শুরু করেছিল। কিন্তু ছুটতে থাকা সুনির্মলের কানে তা পৌঁছাল না।

বাড়ির রোয়াকে বসে ছিলেন মেজ মামা। দূর থেকে পাসের খবর দিলেন সুনির্মল। বাতের ব্যথা অগ্রাহ্য করে মেজ মামা খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাড়ির ভেতরে গিয়ে খবর দিয়ে এলেন। সবাই খুশি, কিন্তু মন গলল না বাবার। তিনি বললেন, ‘যা, গাধা কোথাকার। ফল বের হওয়ার দেরি আছে। তুই বাজে খবর শুনেছিস।

তারপরও পাটনায় এক বন্ধুপুত্রকে সুনির্মলের রোল নম্বর দিয়ে টেলিগ্রাম পাঠালেন বাবা। বিকেলে এল টেলিগ্রামের উত্তর। হ্যাঁ, প্রথম বিভাগ!

বাবা এবার নিশ্চিত হয়ে বললেন, ‘যাক—প্রথম বিভাগে গেছিস!’

সূত্র: সুনির্মল বসু, জীবনখাতার কয়েক পাতা, পৃষ্ঠা ২১৮-২১০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত