Ajker Patrika

অটোরিকশায় এলপি গ্যাস

আব্দুর রাজ্জাক, (ঘিওর) মানিকগঞ্জ
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ২৪
অটোরিকশায় এলপি গ্যাস

মানিকগঞ্জের ঘিওরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় জ্বালানি হিসেবে সিএনজি (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) ব্যবহার না করে করা হচ্ছে এলপিজির (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) ব্যবহার। এলপিজি সাধারণ রান্নার কাজে ব্যবহৃত হলেও এখানে তা অটোরিকশা চালানোয় ব্যবহৃত হচ্ছে। তিতাস গ্যাস এবং দাহ্য আইনে এলপিজি গাড়িতে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। অটোরিকশায় এ গ্যাস ব্যবহারের ফলে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘিওর থেকে জিয়নপুর ভায়া খলসী সড়কে কমপক্ষে ৪০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছে। প্রতিটি গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির এলপিজি সিলিন্ডার।

আতোয়ার রহমান নামে এক চালককে দেখা গেল এলপিজি দিয়ে অটোরিকশা চালাতে। তাঁর অটোরিকশায় ছিল কয়েকজন স্কুলছাত্রী। খানাখন্দে ভরা আর ভাঙাচোরা রাস্তায় ঝাঁকুনিতে যেকোনো সময় এলপিজি সিলিন্ডারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘিওর থেকে জিয়নপুর সংযোগ সড়কের কুস্তা নামক এলাকার রাস্তাটি চার বছর আগে বন্যায় নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে রাস্তাটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে এক পাড়ের গাড়ি যেতে পারে না অপর পাড়ে।

অটোরিকশাচালকেরা বলেন, বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না ওপারে আটকা পড়া প্রায় অর্ধশত সিএনজিচালিত অটোরিকশার। তাই বাধ্য হয়েই চালকেরা তাঁদের গাড়িতে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন রান্না করার সিলিন্ডার গ্যাস অর্থাৎ এলপিজি ব্যবহার করছেন।

উপজেলার খলসী ইউনিয়নের খলসী গ্রামের আজিজুর রহমান নামে এক যাত্রী জানান, প্রতিদিন তাঁকে ব্যবসার কাজে ঘিওর সদরে যেতে হয়। বিকল্প উপায় না থাকায় ঝুঁকি জেনেও তিনি এসব অটোরিকশায় ওঠেন। ভাঙনের ওপারের প্রায় ২০টি গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা, জেলা এমনকি রাজধানীতে যেতে এই অটোরিকশার ওপরই ভরসা রাখতে হয়।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘পাম্পের প্রেশার এবং রান্নাঘরের সিলিন্ডারের প্রেশারে অনেক তফাত। এ ছাড়া জ্বালানি খরচও বেশি পড়ছে। তাই আমাদের উপার্জনও কমে গেছে।’

মোশারফ বলেন, ‘এলপি গ্যাস সিলিন্ডার নিতে কোনো ঝামেলা নেই। গ্যাস ফুরিয়ে গেলে যেকোনো জায়গায় একটি দোকান থেকে সিলিন্ডার কিনে গাড়িতে বসিয়ে নেওয়া যায়।’

ঘিওর উপজেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি কুস্তা এলাকার রাস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। তাই বাধ্য হয়ে ওপারে আটকে থাকা গাড়িগুলোতে বিকল্প পদ্ধতিতে এলপি গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।’

ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, ‘গাড়িতে এলপি গ্যাস ব্যবহার নিষিদ্ধ। সম্প্রতি কয়েকটি গাড়ি ও চালককে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। পরে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় মুরুব্বিদের অনুরোধে এবং চালকেরা আর তাঁদের গাড়িতে রান্না করার গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করবে না—এমন মুচলেকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

তিতাস গ্যাস মানিকগঞ্জ জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল আওয়াল বলেন, ‘গাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এলপিজি বাতাসের চেয়ে ভারী তরল দাহ্য পদার্থ। সিলিন্ডারে ত্রুটি কিংবা ব্যবহার, অসতর্কতায় ও পরিবহনের আগুনের আসা মাত্রই তা ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিপূর্বে আমাদের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্টদের সিএনজিচালিত অটোরিকশায় জ্বালানি হিসেবে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারে নিষেধ করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত