Ajker Patrika

টাই আর পাঁচ টাকা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২২, ১৪: ৩৭
টাই আর পাঁচ টাকা

কাজী মোতাহার হোসেন প্রধান অতিথি হয়ে ১৯৫৮ সালে কুমিল্লায় গেছেন সাবেক পূর্ব পাকিস্তান বিজ্ঞান সম্মেলনে। সম্মেলনের আগের দিন পৌঁছেছেন কুমিল্লায়। থাকার ব্যবস্থা হলো মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীর বাড়িতে। ঠিক সন্ধ্যায় বাড়িতে ঢুকেই কাজী সাহেব রাব্বী সাহেবের স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘পরীক্ষার জন্য কোন বিষয়টা তোমার কঠিন বলে মনে হয়?’

শামসুন্নাহার রাব্বী বললেন, ‘অঙ্ক।’

কাজী মোতাহার হোসেন মুহূর্তমাত্র বিলম্ব না করে বললেন, ‘অঙ্কের খাতা নিয়ে এসো।’

পোশাক না ছেড়েই ডুবে গেলেন অঙ্কের রাজ্যে। অঙ্ক করানোর কাজটি চলল রাত ১১টা পর্যন্ত। এরপর পোশাক বদলানো।

তিনি যে টাই পরেছিলেন, সেটা খোলার সময় বললেন, ‘গলার টাইয়ের বাঁধনটা ঢিল করে মাথার ওপর দিয়ে খুলে রাখো।’

এরপর তিনি এই টাইয়ের গল্পটি শোনালেন রাব্বী সাহেবকে, ‘তিন মাস আগে আমেরিকা থেকে আসার আগে এক দরজির দোকানে গেলাম। দেখলাম দোকানের মালিক আর অন্য একটি লোক একটি অঙ্কের সমাধান করতে খুব ব্যস্ত। আমার সঙ্গী আমাকে একজন পরিসংখ্যানবিদ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে অঙ্কটি সমাধানের অনুরোধ জানালেন। দোকানের মালিক কালা আদমি দেখে নাক সিটকালেন। আমি মুখে মুখেই সমাধান করে দিলাম। তাতে মালিক খুশি হয়ে তাঁর গলার টাই খুলে স্বহস্তে আমার গলায় পরিয়ে দিলেন। আমাকে দেওয়া এই সম্মানের অবমাননা করা যাবে না।’

বছর পাঁচেক পর তিনি কুমিল্লায় গিয়েছেন বিবেকানন্দের জন্মতিথির অনুষ্ঠানে। বিমানবন্দরে নেমেই তিনি রাব্বী সাহেবের হাতে ৫ টাকা তুলে দিয়ে বললেন, ‘আমাকে আমন্ত্রণ জানাতে যারা গিয়েছিল, তাদের দিয়ে দিয়ো।’

বোঝা গেল, সেগুনবাগিচা থেকে বিমানবন্দরে আসার জন্য তাঁরা কাজী সাহেবের হাতে ৫ টাকা দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বিবেকানন্দকে নিয়ে পড়তে গিয়ে কাজী সাহেব দেখলেন, স্বামীজি মানবকল্যাণের জন্য পদব্রজে গোটা ভারত ভ্রমণ করেছেন। তাই তিনি সেগুনবাগিচা থেকে বিমানবন্দর হেঁটে এসেছেন। ৫ টাকা বেঁচে গেছে।

সূত্র: কাজী মোতাহার হোসেন, আপনজনদের স্মৃতিকথা, পৃষ্ঠা ৩৯-৪০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত