Ajker Patrika

কাঠকয়লায় চলে জীবন

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২১, ২২: ২৬
কাঠকয়লায় চলে জীবন

গৌরীপুর-গোপালপুর সড়কের পাশের জমিতে চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বংশ পরম্পরায় অনেকেই এই কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে বিক্রি করেন। প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো বাপ-দাদার ঐতিহ্য এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এখনো অনেকে কাজ করে যাচ্ছেন। নানা প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এই কাজকেই জীবন-জীবিকার অবলম্বন করে বেঁচে থাকতে চান।

সরেজমিনে নাটোরের লালপুরের পালিদেহা গ্রামে দেখা যায়, সড়কের পাশে নির্মিত কারখানার এক বিঘা জমিতে নির্মিত পাঁচটি চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। সেখানে তৈরি করা হচ্ছে কাঠকয়লা।

এ বিষয়ে কারখানা মালিক শাহাবুল ইসলাম (৩৫) বলেন, এক বিঘা জমি পাঁচ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে পাঁচটি চুল্লি। প্রতিবছর জমির মালিককে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। শুকনো মৌসুমে বছরে ছয় মাস এই কয়লা উৎপাদন করা যায়।

শাহাবুল ইসলাম আরও বলেন, একটি চুল্লিতে ১৭০ মণ কাঠ পুড়িয়ে ১ টন, অর্থাৎ ৩৫ বস্তা কয়লা উৎপাদন করা হয়। ভাটায় পাঁচটি চুল্লিতে এক চালানে সাড়ে ৮০০ মণ কাঠ পুড়িয়ে ১৭৫ বস্তা কয়লা পাওয়া যায়। এক চালান খড়ি পোড়াতে সময় লাগে ১০ দিন। প্রতি মণ কাঠখড়ি বিক্রেতাদের থেকে সাধারণত ১১০ টাকা দরে কেনেন তিনি। ইটভাটার মৌসুমে ১৫০ টাকা মণ দরে কিনতে হয়। প্রতি ২৫ কেজি কয়লার বস্তা বিক্রি হয় ৬৫০ টাকা দরে।

কাঠকয়লা বিক্রেতা মুকুল সরকার (৬১) বলেন, বাপ-দাদারা ১৫০ বছর আগে পার্শ্ববর্তী আরামবাড়িয়ায় এ ব্যবসা শুরু করেন। পাঁচটি চুল্লি বানাতে ১০ দিন সময় লাগে। নিজেরাই চুল্লি তৈরির কারিগর ছিলেন। প্রতি চুল্লিতে ১৭০ মণ খড়ি সাজিয়ে আগুন দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১০ দিন অতিবাহিত হলে ধোঁয়া দেখে বোঝা যায় কয়লা প্রস্তুত হয়ে গেছে। মাসে ২ হাজার ৫৫০ মণ খড়ি লাগে। ছয় মাসে ১৫ হাজার ৩০০ মণ খড়ি পুড়িয়ে কয়লা বানানো হয়।

এ বিষয়ে আনার আলী (৪৫) নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এই ব্যবসা পরিচালনা করা হয়। উৎপাদিত কয়লা পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হয়। অটোরাইস মিল, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, স্বর্ণকার, কামারশালা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ঈশ্বরদী সেনাবাহিনী ফার্মসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় এ কয়লা। এ কাজকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকতে চান তিনি। এ ছাড়া সরকারি সহায়তা পেলে এ ব্যবসায় আরও উন্নতি করা সম্ভব।

লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কাঠকয়লা তৈরিতে ব্যবহৃত খড়ি সংগ্রহের কারণে বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এতে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত