Ajker Patrika

পকেটে ছিল কুড়ি টাকা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ০০
পকেটে ছিল কুড়ি টাকা

শফিউর রহমান ছিলেন ঢাকা হাইকোর্টের একজন কর্মচারী। ১৯১৮ সালে তাঁর জন্ম। জন্মেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগর গ্রামে। কলকাতা গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে তিনি আইকম পাস করেন। পড়াশোনা আর এগোয়নি। দারিদ্র্য তাঁকে চাকরিজীবী হতে বাধ্য করে। চাকরিরত অবস্থায়ই দেশভাগ হয়। তিনি আর পশ্চিমবঙ্গে থাকেননি। স্ত্রী আকিলা বেগমকে নিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। কেরানির কাজ নেন হাইকোর্টে।

শফিউর রহমান গুলিবিদ্ধ হন ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। সেদিন সকালে তিনি সাইকেলে করে নবাবপুর রোড দিয়ে তাঁর অফিসে যাচ্ছিলেন। সে সময় পুলিশের একটি গুলি এসে তাঁর শরীরে লাগে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি মারা যান। চিকিৎসকেরা যখন শফিউর রহমানের দেহে অস্ত্রোপচার করছিলেন, তখন হাসপাতালে তাঁর বৃদ্ধ মা, বাবা, স্ত্রী ও মেয়ে শাহনাজ উপস্থিত ছিলেন।

শফিউরের মৃত্যু হলেও লাশ স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়নি। আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। কবরটি এখনো আছে।

শফিউর রহমানের মৃত্যুর তিন মাস পর তাঁর একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। তাঁর নাম রাখা হয় শফিকুর রহমান।

স্মৃতিচারণা করে আকিলা খাতুন বলেন, ‘আমার শাশুড়ি বলেছিলেন ওর কবরের জায়গাটা কিনে দিস। ওর মেয়ে শাহনাজ এবং গর্ভজাত শিশু যাতে তাদের বাবার একটি স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পায়। আমি আমার জমানো ১০০ টাকা ওনাদের হাতে দিলাম। এখন এই কবর বাঙালি জাতির অমর স্মৃতি হয়ে আছে। তিনি মারা গেছেন শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায়, রোববার রাতে আজিমপুর কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়। আমার শ্বশুর ও দেবর ট্রলির ওপর শোয়ানো আমার স্বামীকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখেন। তাঁর তখনো জ্ঞান ছিল। হাতে ঘড়ি ও হীরার আংটি ছিল। পকেটে ছিল কুড়ি টাকা।... তিনি তখন বারবার শাহনাজের কথা বলছিলেন। ‘আমার শাহনাজ, আমার শাহনাজ।’

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের শহীদেরা, বাংলা একাডেমি, ১৯৯১, পৃষ্ঠা ৬৪, শফিকুর রহমান, ভাষাশহীদ শফিউর রহমান, বাংলা একাডেমি, পৃষ্ঠা ৩৩

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত