পাকিস্তানের সঙ্গে চোটও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ

বিশ্বকাপ শুরু হতে এক মাসও বাকি নেই, গতকাল থেকে দল দিতে শুরু করেছে ক্রিকেট বোর্ডগুলো। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) এখানে একটা ‘পজ’ দিয়ে রাখতে হচ্ছে। তাদের বিশ্বকাপ দল তৈরি হয়ে গেলেও কিছু কারণে এখনো সেটি ঘোষণা করেনি বিসিবি। সেই কারণগুলোর মধ্যে অবশ্যই একটি—ইনজুরি বা চোট।

গতকাল দুপুরে লাহোর থেকে বড় দুঃসংবাদ এল, দুর্দান্ত ছন্দে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর এশিয়া কাপ শেষ। এক বছর আগেও যে শান্তকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্মম ব্যঙ্গবিদ্রূপের শিকার হতে হয়েছে, টুর্নামেন্টে তাঁকে হারিয়ে আফসোসের শেষ নেই বাংলাদেশের দর্শকদের।

পেশির চোটে ভোগা শান্ত আজ দেশে ফেরার ফ্লাইট ধরবেন। তাঁর কাজ হবে তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে আবার তৈরি করা।

শান্তর দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের দৌড়ে তিনিই এগিয়ে। ২ ম্যাচে করেছেন ১৯৩ রান। পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮৯ রানের পর লাহোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তীব্র গরমে ক্র্যাম্প বা মাংসপেশিতে টান লাগার পরও খেলেছেন ১০৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস—নিজেকে যখন তাঁর আরও ওপরে নিয়ে যাওয়ার কথা, তখনই আততায়ীর মতো আঘাত করল চোট।

শান্তকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল বলেই হয়তো গ্রুপ পর্ব খেলতে না পারা লিটন দাসকে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছে লাহোরে। গত দুই মাসে অসুস্থতা কিংবা চোটাঘাতে সবচেয়ে বেশি ভুগেছে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল এখন যাচ্ছেন পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।

মাঝে লিটন জ্বরে আক্রান্ত হলেন। শান্তও ছিটকে গেলেন এশিয়া কাপের মধ্যে। আজ লাহোরে সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে বাংলাদেশকে প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের পাশাপাশি চোট নিয়েও যথেষ্ট ভাবতে হয়েছে। লাহোরের প্রচণ্ড গরমে কাল তাই অনুশীলন না করাই শ্রেয় মনে করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

অনুশীলন বাতিল করে হোটেলে নিজেদের যতভাবে সতেজ রাখা যায়, সেটাই তারা করেছে। সুইমিং, জিমের পাশাপাশি যাদের ট্রিটমেন্টের দরকার ছিল, তারা ফিজিও-ট্রেনারের সেবা-শুশ্রূষা নিয়েছেন। স্ট্র্যাটেজিক ও টেকনিক্যাল মিটিংয়ের পাশাপাশি হয়েছে টিম বন্ডিং সেশন। সেখানে ছিল ‘ফান এন্ড গেমের’ আয়োজন।

কোচ কিংবা টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা শুধু কৌশল নিয়ে কাটখোট্টা বক্তৃতা কিংবা দিক-নির্দেশনাই দেননি, খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে চাঙা রাখতে নিজেদের মধ্যে মজা-রসিকতা, নাচ-গানও হয়েছে।

টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য গতকাল ফোনে বলছিলেন, এশিয়া কাপ চলছে, সামনে নিউজিল্যান্ড সিরিজ, ঠিক এরপরই বিশ্বকাপ। টানা ব্যস্ত সূচিতে খেলোয়াড়দের সতেজ, চোটমুক্ত রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু মাঠের প্রতিপক্ষই নয়, চোটকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের তৈরি রাখতে হচ্ছে। এখন থেকে একটু বিরতি পেলে এভাবেই রিকভারি সেশনের মধ্য দিয়ে যাবে বাংলাদেশ দল।

আর পেসার তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘এই কন্ডিশনে ক্রিকেট খেলাটা বেশ কঠিন। তবে এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এখানে আমরা আমাদের রিকভারিতে বেশি খেয়াল রাখছি। একই সঙ্গে দলের ফিজিও-ট্রেনার আমাদের অনেক সহায়তা করছেন।

আমরা নিজেদের যথেষ্ট যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করেছি, যেন সবাই সুস্থ থেকে খেলতে পারি। অবশ্যই এটা চ্যালেঞ্জিং, তবে এর মধ্যেই সেরাটা খেলতে হবে।’

পাকিস্তানের বিপক্ষে চার বছর পর আজ ওয়ানডে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুই দলের পরিসংখ্যানে যথেষ্ট পার্থক্য আছে, ৩৭ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয় ৫টিতে, পাকিস্তান জিতেছে সেখানে ৩২টিতে। আর অসাধারণ ছন্দে আছে স্বাগতিক দল। আইসিসি ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে বর্তমানে ১ নম্বর দল বলেই নয়, এই এশিয়া কাপে পাকিস্তান খেলছে শিরোপার দাবিদার হিসেবে।

লাহোরের উইকেট কতটা রানপ্রসবা, সে তো বাংলাদেশই আফগানিস্তানের বিপক্ষে করে দেখিয়েছে। গতকাল শ্রীলঙ্কান ব্যাটাররাও হাসিমুখে রান তুলেছেন। আজ তাসকিন-শরীফুলদের কঠিন পরীক্ষাই নিতে নামবেন বাবররা। অবশ্য আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের পেসাররা যথেষ্ট ভালো করেছেন। তাসকিনরাও তাই ছেড়ে কথা বলবেন না।

আবার পাকিস্তানি পেস আক্রমণও কম বিধ্বংসী নয়। ক্যান্ডির পাল্লেকেলেতে রোহিত-কোহলিদের নাচিয়ে ছেড়েছেন শাহিন-নাসিম-হারিসে গড়া পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার ত্রয়ী। সাকিব-মুশফিকদের সেভাবেই তৈরি হয়ে নামতে হবে আজ। শান্ত নেই; আর লিটন যেহেতু দলে যোগ দিয়েছেন, আজও ওপেনিংয়ে পরিবর্তন আসাটা অবধারিত বলতে হবে।

টপঅর্ডার ছাড়া দলের বাকি সমন্বয় পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। সুপার ফোরে ওঠার চ্যালেঞ্জ ছিল, সেটি উতরে গেছে বাংলাদেশ। এখন এই পর্বে যা মিলবে, সেটিই বিশ্বকাপের আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে সাকিবদের।