Ajker Patrika

দেড় বছর পর মঞ্চে দ্রোহ

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২২, ১৫: ১৭
দেড় বছর পর মঞ্চে দ্রোহ

‘আরে ওই রহিম বাদশা। লয়া বউয়ের আচোলেত কি মরণ নিন্দ ধরিছে? আরে ওই রহিম বাদশা। নিন্দত থিনে ওঠ। লয়া বউয়ের রাঙা মুখখানা দেখি। রূপে যদি রূপবান না হয়, আজ তোর খবর আছে। ক্যারে রহিম বাদশা? বাইর হইয়্যা আই।’ বিয়ের পরদিন সকালে আলালের দাদি আলালকে এভাবেই ঘুম থেকে তোলেন।

আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে ওঠেন আলাল। নাতবউয়ের মুখ দেখে দাদি বলেন, ‘রহিম বাদশা, এ তো সত্যি সত্যিই রূপবান রে।’ পাকিস্তান আমলে তিনি স্বামীর সঙ্গে বগুড়া শহরে হলে গিয়েছিলেন ‘রূপবান’ সিনেমা দেখার জন্য। সিনেমাটি এতই ভালো লেগেছিল যে, তারপর থেকে গ্রামে কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখলেই বলেন, ‘এ তো সত্যি সত্যিই রূপবান রে!’ সেই কথা বললেন আলালের বউকে দেখেও।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার এক গ্রামের মুসলিম পরিবারের ছেলে আলাল। বাবা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এখন বেঁচে নেই। কিন্তু গ্রামে আছেন সেদিনের রাজাকার মৃধা মণ্ডল। হিন্দুদের বিতাড়িত করে বসতভিটা দখলে নেওয়া তাঁর নেশা। ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজের আখের গোছাতেই তিনি ব্যস্ত সবসময়। একদিকে রাক্ষুসে যমুনার

বন্যা-ভাঙন, অন্যদিকে মৃধা মণ্ডলের রক্তচক্ষু। এই নিয়েই বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়নার নাটক ‘দ্রোহ’।

রাজশাহীতে ষষ্ঠ অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় নাট্যোৎসবে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নাটকটি মঞ্চে আনে বগুড়া থিয়েটার। এই প্রথম রাজশাহীর মঞ্চে নাটকটি দেখা গেল। নাটকটি রচনা ছাড়াও মঞ্চায়নে নির্দেশনা দেন তৌফিক হাসান ময়না। সংগীত নজরুল ইসলামের। অভিনয় করেন কনক কুমার পাল, পাপড়ি ইসলাম, নিশু ইসলাম, দীপাবলি মুখার্জি, জাকিউল ইসলাম সবুজ, বিধান কৃষ্ণ রায়, সুপিন বর্মণ, মৌসি, সানানা হাসান মন্দ্রিতা প্রমুখ।

দ্রোহ নাটকে উঠে এসেছে সারিয়াকান্দির যমুনাপাড়ের গল্প। সম্পূর্ণ আঞ্চলিক ভাষায় নাটকটি রচিত হয়েছে। নাটকের গল্প শুরু বিয়ের উৎসব ঘিরে। তারপর উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের গল্প আর রাজাকারদের উল্টো স্রোতে ভেসে যাওয়ার কথা। নাটকে দেখানো হয়, এত বছর পরও সেই অশুভ শক্তি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নতুন পরিচয়ে। তারা চেষ্টা করে ধর্মান্ধতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের হাজার বছরের সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করে দিতে। কিন্তু এখনো আলালের মতো মুক্তমনের মানুষ রুখে দাঁড়ায়। অশুভ শক্তির সঙ্গে শুভ শক্তির এই লড়াইয়ের গল্পই হলো ‘দ্রোহ’।

নাটকের শেষে যমুনার বানের পানিতে তলিয়ে যায় গোটা এলাকা। কেবল ডোবেনি উঁচু ভূমির এক মসজিদ। একটি সাপ গিয়ে আশ্রয় নেয় মসজিদে। মৃধা মণ্ডলের লোকেরা সাপটিকে মারতে প্রস্তুত। তাতে বাধা দেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। তারা বলেন, এ তো সাপ নয়, তাদের মা মনসা। এ কথা শুনে আরও খেপে যান মৃধার লোকেরা। বলেন, মসজিদে ঢুকেছে বিধর্মী সাপ! এ নিয়ে শুরু হয় হিন্দু-মুসলিম মারামারি। যমুনার বানের পানিও বাড়তে থাকে। মসজিদ ছেড়ে সাপটি পানিতে ভেসে যায়। আসে সরকারের ত্রাণ। তা দেখে সবাই বলতে থাকে, ‘এই ইলিফরে...হামাগের ইলিফ!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্দালিব রহমান পার্থর স্ত্রীকে বিদেশ যেতে বাধা

‘মেয়েরা যেন আমার মরা মুখ না দেখে’, চিরকুট লিখে ঠিকাদারের ‘আত্মহত্যা’

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত