Ajker Patrika

প্রগতি লেখক সংঘ

সম্পাদকীয়
প্রগতি লেখক সংঘ

প্রগতি লেখক সংঘের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সেকালের প্রায় সব মেধাবী সংস্কৃতিসেবীর। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। ১৯৪২ সালে ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিমণ্ডলীর প্রধান ছিলেন তারাশঙ্কর। ভাবনার দিক থেকে তিনি রাজনীতিক ছিলেন না কখনো। সাহিত্যই ছিল তাঁর ব্রত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা এক হলে তারাশঙ্কর প্রগতি লেখক সংঘে যোগ দিয়েছিলেন। ‘আমার সাহিত্য জীবন’ বইয়ে তারাশঙ্কর পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি মার্ক্সের ক্যাপিটাল বা অন্য কোনো লেখা পড়েননি। বাংলা ভাষায় লেখা মার্ক্সবাদের ওপর কিছু প্রবন্ধ শুধু পড়েছেন। কিন্তু ১৯১৬-১৭ সাল থেকে গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে তিনি নিজের মতো করেই বুঝেছিলেন, মানুষের প্রতি মানুষের অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্তের কাল একদিন আসবেই।

একদিন গোপাল হালদার হাজির হলেন ‘শনিবারের চিঠি’ দপ্তরে। তিনি সেখানে সজনীকান্ত দাসের সই নিলেন, কিন্তু তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই নিলেন না। এটা তারাশঙ্করের মনে লাগে। তিনি ভাবেন, প্রগতিবাদী সাহিত্যিকেরা বুঝি তাঁকে লেখক বলে গণ্য করেন না। এ ঘটনার দুই বছর পর সরোজ দত্ত আর বিনয় ঘোষ এসে তারাশঙ্করকে সংঘের সভাপতি হওয়ার অনুরোধ নিয়ে হাজির হন। তারাশঙ্কর সম্মত হন।

তারাশঙ্কর কোনো মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লেখালেখি করেননি। প্রগতি লেখক সংঘ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘সেকালে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে এ-প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক বাইরের থেকে কিছু ছিল না। ভিতরে অবশ্যই ছিল, কিন্তু সে ভিতরের সঙ্গে আমার বা আমাদের মতো অধিকাংশেরই কোনো সম্পর্ক ছিল না। সংঘে নিছক কমিউনিস্ট কর্মী বা নেতারা কদাচিৎ আসতেন।’

কিন্তু ধীরে ধীরে রাজনৈতিক নেতারা এসে সংঘের কাজে অংশ নিতে থাকেন। তাতে তারাশঙ্করের মনে সংশয় জন্মায়। কমিউনিস্টদের নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার ব্যাপারে তারাশঙ্করের শ্রদ্ধা ছিল, কিন্তু পার্টি আমলাতন্ত্রের সঙ্গে তাঁর বিরোধও ঘটেছিল। যেহেতু পার্টির সদস্য ছিলেন না, তাই সহজেই তিনি সংঘ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন। 

সূত্র: অশ্রুকুমার সিকদার, কিল মারার গোঁসাই, পৃষ্ঠা ৭৭-৯৮

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত