Ajker Patrika

সাগরে নামায় আগ্রহ হারাচ্ছেন জেলেরা

খান রফিক, বরিশাল
সাগরে নামায় আগ্রহ হারাচ্ছেন জেলেরা

ঝড়-ঝঞ্ঝার ধরন এমনভাবে বদলে যাচ্ছে যে জেলেরা সাগরে নেমে সংকেত পাওয়ার আগেই দুর্যোগের কবলে পড়ছেন। গত শুক্রবার বঙ্গোপসাগরে শতাধিক ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়ে। এতে উপকূলীয় এলাকা পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলার এখনো প্রায় ১১৩ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। গভীর সাগরে যাওয়া ট্রলারে উন্নত প্রযুক্তি না থাকায় জেলেদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এ জন্য এক সপ্তাহ ধরে সাগরে ইলিশ আহরণ ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাবে মাছের দামও বেড়ে গেছে।

ঝড়ের কবলে পড়া জেলেরা দাবি করেছেন, নিরাপত্তার অভাবে তাঁরা আগ্রহ হারাচ্ছেন সাগরে নামতে। মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে বরিশাল বিভাগের ৩ হাজার ট্রলারে বিশেষ ডিভাইস স্থাপন করা হচ্ছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, এ মাসে বৃষ্টি হয়েছে কম; কিন্তু আবহাওয়ার একধরনের শক্তি রয়েই গেছে। এটি জড়ো হয়ে আবহাওয়া অস্বাভাবিক আচরণ করে। ফলে হঠাৎ ঝড়-ঝঞ্ঝা হয়। জেলেদের ট্রলার আধুনিক নয়। এভাবে সাগরে যাওয়া জেলেদের জীবন ঝুঁকিতেই থেকে যাচ্ছে। 

১৯ আগস্ট ভোরে নিম্নচাপের কারণে গভীর সাগরে আকস্মিক ঝড়ের কবলে পড়েন জেলেরা। গতকাল বুধবার বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্যমতে, ১১৩ জন জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। ওই ঘটনার পর থেকে জেলেরা এক সপ্তাহ সাগরে না যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে বাজারে।

বরিশাল পোর্ট রোডের মৎস্য ব্যবসায়ী ইয়ার উদ্দিন বলেন, নিম্নচাপের পর নগরে সাগরের মাছ আসছে না। ইলিশ নেই বললেই চলে। গতকাল ১ কেজির ইলিশ মণপ্রতি ৬০ হাজার এবং এলসি সাইজের ইলিশ প্রতি মণ ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

কলাপাড়ার কুয়াকাটার লতাচাপিল ইউনিয়নের মাইটভাঙ্গা গ্রামের জেলে শাহাদাৎ মৃধা ঝড়ের কবলে পড়ে সাগরে দুদিন ভেসেছেন। তিনি জানান, তাঁরা ঝড় আসার সংকেতই পাননি। ট্রলারেও উন্নত প্রযুক্তি নেই। ফিরে এলেও কেউ খবর নেননি। তাই পরিবার সাগরে যেতে দিতে চায় না।

কলাপাড়া উপজেলা ফিশিং ট্রলার মাঝি সমবায় সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি বলেন, যে গতিতে ঝড় আসছে, তা মোকাবিলা করা অসম্ভব। 

পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, জেলেদের আধুনিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি আছে। দিক নির্ণায়ক যন্ত্র, লাইফ জ্যাকেট না থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে জেলেদের। ওই ঘটনায় সাগরে মাছ ধরা পাঁচ দিন বন্ধ ছিল। তাঁর মতে, গভীর সাগরে ইলিশ আছে, কিন্তু জেলেরা সেখানে যান না। 

বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিচুর রহমান তালুকদার বলেন, জেলেদের মাছ ধরারই সক্ষমতা নেই। সাগরে যান ঝুঁকি নিয়ে। যেসব ট্রলার আছে তাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। যে কারণে তাঁরা বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকার ৩ হাজার ট্রলারে ডিভাইস স্থাপন করবেন, যাতে সহজে ট্রলারের অবস্থান এবং বার্তা দেওয়া যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত