Ajker Patrika

দোয়েল পাখি

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ১৮
দোয়েল পাখি

মুক্তিযুদ্ধ চলছে। পাকিস্তানিরা দালাল রাজাকার, আলবদরদের সহযোগিতায় বাঙালিদের হত্যা করছে। বিভিন্ন জায়গায় জমে উঠছে লাশের স্তূপ। টিকতে না পেরে অনেকেই সীমান্ত অতিক্রম করছেন। ভারতে শরণার্থীর সংখ্যা হয়ে গেল প্রায় ১ কোটি। নিজ দেশে পরবাসী হলেন সাড়ে ৬ কোটি মানুষ। নানাভাবে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করছেন। সে এক অভূতপূর্ব সময় এসেছিল দেশের রাজনৈতিক জীবনে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী-সাহিত্যিকদের একটা বিরাট অংশ বাংলাদেশের পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছেন। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও শামিল হয়েছেন তাঁদের মধ্যে। সহজ ভাষায় লক্ষ্যভেদী কবিতা লিখে সুভাষ তত দিনে নামী কবি। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আত্মীয়তা তখনো টিকে আছে তাঁর। মুক্তিযুদ্ধের সময়ই তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে সাতক্ষীরা, যশোরে এসেছিলেন।

সে সময় এক খেয়াল এল সুভাষের মাথায়। জীবনানন্দের বাংলাদেশ নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি করতে চাইলেন তিনি। মাথার মধ্যে তখন ঘুরছে জীবনানন্দের কবিতা। কবিতার চিত্রকল্পগুলোর মালা গাঁথছিলেন সুভাষ।

‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতাটার এক জায়গায় আছে, ‘অন্ধকার জেগে ওঠে ডুমুরের গাছে/চেয়ে দেখি/ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে/ভোরের দোয়েল পাখি।’

দোয়েল পাখি দেখতে কেমন, স্মরণে আনতে পারছেন না সুভাষ। তিনি প্রশ্ন করেন ইপিআরের মুক্তিযোদ্ধা হক সাহেবকে: ‘আচ্ছা হক সাহেব, এদিকে দোয়েল পাখি দেখতে পাওয়া যায়?’

কুমিল্লার লোক হক সাহেব। তবে অনেকটা সময় কাটিয়েছেন যশোর ক্যান্টনমেন্টে। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় দেখতে পাবেন।’ ক্যামেরাম্যান জ্যোতিকে বললেন, ‘ভোরবেলা, ডুমুরগাছ, বড় পাতার নিচে বসে থাকা দোয়েল পাখি, এসব কি ক্যামেরায় তোলা সম্ভব?’

জ্যোতি বললেন, ‘নিশ্চয়ই সম্ভব।’

পরদিন সকালে যশোর শহরের উপকণ্ঠে ইটখোলার মাঠে নাকে কাপড় দিয়ে হক সাহেব বললেন, ‘ওই দেখুন, দোয়েল পাখি!’

সুভাষ দেখলেন, অর্ধভুক্ত একটি শবদেহের ওপর বসে তার শরীর খুঁটে কৃমি খাচ্ছিল যে পাখিটা, সেটার নাম দোয়েল।

সূত্র: সুভাষ মুখোপাধ্যায়, আনন্দবাজার পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত