Ajker Patrika

নির্বাচনী ইশতেহারে প্রবীণ ইস্যু

নির্বাচনী ইশতেহারে প্রবীণ ইস্যু

দেশ পরিচালিত হয় রাজনীতিবিদদের দ্বারা। আবার রাজনীতিবিদেরা পরিচালিত হন দলের ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনী ইশতেহার দ্বারা। রাজনীতি নিয়ে অনেকের মনেই এখন বিরূপতা থাকলেও এটা অস্বীকার করা যাবে না যে রাজনীতিই মূলত একটি দেশের চালিকাশক্তি। প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনী ইশতেহার থাকে।

দলগুলো মানুষের জন্য কী করতে চায়, কীভাবে দেশটিকে পরিচালনা করতে চায়, দেশের নাগরিকদের জন্য তাদের পরিকল্পনা কী, তা মূলত রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে লেখা থাকে। ইশতেহারে মূলত ভালো ভালো কথাই লেখা থাকে। তবে ক্ষমতায় গেলে আবার ভালো কাজের দিকে আগ্রহ কমও দেখা যায়। এসব এখন অনেকেই জানে।

আমাদের দেশে পাঁচ বছর পর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে থাকে। এই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় গেলে জনসাধারণের জন্য কী করবে, তার একটি বর্ণনা দেয়। একে বলা হয় নির্বাচনী ‘ইশতেহার’। যেই দল ক্ষমতায় যায়, তারা ইশতেহারে বর্ণিত ওয়াদাগুলো পালন করতে ব্যর্থ হলে যারা ক্ষমতার বাইরে থাকে, তারা ক্ষমতাসীনদের মনে করিয়ে দেয়, জনগণের কাছে কী কী ওয়াদা করা হয়েছিল। ফলে রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে কোনো বিষয় যুক্ত হলে তা বাস্তবায়ন উপেক্ষা করা খুব সহজ হয় না।

কিন্তু আমাদের দেশ হলো সব সম্ভবের দেশ। এখানে ক্ষমতায় গিয়ে নির্বাচনী অঙ্গীকার ভুলে গেলেও বিশেষ কিছু যায়-আসে না। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় অবশ্য ভিন্ন। আমরা দেখতে চাই আমাদের দেশের একটি বিশেষ জনগোষ্ঠী প্রবীণদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে কী বলা হয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে ‘প্রবীণ’ ইস্যুটি কীভাবে আছে, তা পাঠকের বিবেচনার জন্য তুলে ধরছি।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রবীণদের বিষয়ে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা হচ্ছে:

  • সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কার্যক্রমে প্রবীণদের অন্তর্ভুক্তির বর্তমান সংখ্যা ও সহায়তার পরিমাণ সম্প্রসারণে বাস্তবতার আলোকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 
  • প্রবীণদের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে আয় সৃষ্টিকারী কার্যক্রম গ্রহণ, প্রবীণদের বিষয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পাঠ্যবইয়ে আলাদা অধ্যায় সংযোজন, যানবাহন এবং আবাসিক স্থাপনাগুলোতে প্রবীণদের জন্য আসন/পরিসর নির্ধারণ, তৃণমূল পর্যায়ে প্রবীণদের জেরিয়াট্রিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ এবং হাসপাতাল, বিমানবন্দর, বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে ওঠানামার ব্যবস্থা প্রবীণবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রথম পাতায় ‘আমাদের বিশেষ অঙ্গীকারে’ ২১টি অঙ্গীকার করেছে। এর মধ্যে প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণকে ২০ নম্বর অঙ্গীকারের মধ্যে রাখা হয়েছে। সাফল্য ও অর্জন হিসেবে দেখানো হয়েছে সিনিয়র সিটিজেন নীতিমালা, জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩, পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩। সরকারের বিশেষ বিবেচনায় রয়েছে সমন্বিত পেনশন কার্যক্রম, জাতীয় সামাজিক বিমা কর্মসূচি ও বেসরকারি ভলান্টারি পেনশন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ে বলেছে, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং বয়োবৃদ্ধদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপি ‘আবাসন, পেনশন ফান্ড ও রেশনিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা’ শিরোনামে বলেছে, দুস্থ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত মহিলা এবং অসহায় বয়স্কদের ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে। বেসরকারি ও স্ব-নিয়োজিত খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য বার্ধক্যেও দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একটি ‘পেনশন ফান্ড’ গঠন করা হবে। গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা চালু করা হবে।

বাম গণতান্ত্রিক জোট নির্বাচনী ইশতেহারের ১৬ নম্বর কর্মসূচিতে লিখেছে, শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধ-দুস্থ নাগরিকবৃন্দের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছে, দেশে বয়স্ক নাগরিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জন্য বিশেষ সুবিধাসমূহ প্রসারিত ও বৃদ্ধি করা হবে। গ্রাম ও শহরের অসহায় বৃদ্ধ নাগরিকদের জন্য পেনশন, বয়স্ক ভাতা, আবাসন কেন্দ্র, স্যানিটোরিয়াম সুবিধা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে প্রবীণ বিষয়টি যুক্ত করাটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভবিষ্যতে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় বড় দলগুলো একে অপরের নির্বাচনী ইশতেহার ভালো করে পড়বে, ফলে প্রবীণ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবে। প্রবীণেরা ভোটার, তাই সব রাজনৈতিক দলের কাছে তাঁদের গুরুত্ব রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষার্থীদের ‘কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে’ সপরিবারে পালিয়েছেন বিএসবির বাশার

পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ‘প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের’ নির্দেশ

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত