Ajker Patrika

ইবনে খালদুন

সম্পাদকীয়
ইবনে খালদুন

আরবের বিখ্যাত দার্শনিক ইবনে খালদুনকে বলা হয় সমাজবিজ্ঞানের অনানুষ্ঠানিক জনক। পাশ্চাত্যে যখন সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসতত্ত্বের সূচনা হয়নি, এর আগেই তিনি তাঁর লেখনীতে এ বিষয়ের অবতারণা করেছেন।

খালদুনের জন্ম তিউনিসিয়ার তিউনিস শহরে, ১৩৩২ সালের ২৭ মে। তাঁর প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের হাতেখড়ি হয় বাবার কাছে। আরবি ভাষাতত্ত্ব ছিল তাঁর অধ্যয়নের অন্যতম বিষয়। কোরআন, হাদিস, শরিয়াহ, ফিকহও পড়েছেন। সেই সঙ্গে গণিতবিদ আল-আবিলির কাছে গণিত, যুক্তিবিদ্যা ও দর্শন শেখার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। তিনি আবু রুশদ, ইবনে সিনা, আল-রাজির কাজ নিয়েও পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর শিক্ষার্জনের কাল চলে। এ সময়েই মিসর থেকে মৌরিতানিয়া পর্যন্ত সমগ্র উত্তর আফ্রিকায় ভয়াবহ প্লেগ রোগ দেখা দেয়। এই রোগে তাঁর পিতা-মাতার মৃত্যু হয়।

২০ বছর বয়সে তিনি তিউনিসিয়ার শাসকের দরবারে ক্যালিগ্রাফার হিসেবে কাজ নেন। দরবারের কাজকর্মের বিবরণ লিখে রাখতেন। ১৩৫২ সালে তিউনিস দখল হলে তিনি মরক্কোর ফেজে শহরে চলে যান। সেখানে তিনি রাজকীয় ফরমান লেখার কাজ পান। তবে রাজার কথা মেনে না চলার কারণে তাঁকে ২২ মাস কারাগারে বন্দী থাকতে হয়। জীবনের শেষ সময় কাটিয়েছেন মিসরে। পড়িয়েছেন আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়েও।

তিনি ছিলেন একজন কঠোর সমাজ সমালোচক। তিনি তাঁর দেশে অবস্থানকালে সেখানকার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহে নিরলসভাবে নিয়োজিত ছিলেন। এভাবে তিনি এই অঞ্চলের জনগণ ও রাজনীতি সম্পর্কে প্রচুর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন করেন। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল মুক্কাদ্দিমা’ রচনা করেন।

এটি এখনো রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মৌলিক গ্রন্থ। এ জন্য তাঁর গ্রন্থ বিধৃত বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের দক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে ইতিহাসবিদেরা তাঁকে ইতিহাসবিজ্ঞানের একজন শ্রেষ্ঠ তাত্ত্বিকের মর্যাদা দিয়েছেন।

মহান এই দার্শনিক ও ইতিহাসবিদের মৃত্যু হয় কায়রোতে ১৪০৬ সালের ১৯ মার্চ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত