Ajker Patrika

অভিমান ও মানভঞ্জন

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২২, ১৪: ২৯
অভিমান ও মানভঞ্জন

শচীন দেববর্মনের কাছে সহকারী সংগীত পরিচালক হিসেবে তখন কাজ করছেন মান্না দে। তবে শুধু সহকারী সংগীত পরিচালক হিসেবে নন, সব ধরনের কাজেই সহকারী তিনি; অর্থাৎ গানের নোটেশন করা, নতুন করা সুর শিল্পীদের গলায় তুলে দেওয়া, শিল্পীদের সঙ্গে যন্ত্রীদের মহড়া করানো—সবকিছুই করতে হয়। শচীনকর্তা বললেই পান নিয়ে আসেন, চাইলেই ছোলা ভাজা, বাদাম ভাজা এনে দেন। বাজারও করে দেন।

মান্না দের অভিমান হতো। তিনি নিজে ভালো গান করেন, অথচ শচীনকর্তা তাঁকে দিয়ে কোনো গান করান না। অন্য শিল্পীদের গলায় যে গানগুলো তুলে দেওয়া হতো, সেগুলো মান্না দে তাঁদের চেয়ে ভালো গাইতেন বলে নিজে বিশ্বাস করতেন। অভিমানের মেঘ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, কিন্তু তা শচীন দেববর্মণ পর্যন্ত পৌঁছায় না। কেন মান্নার ‘শচীনদা’ একবারও মান্নাকে সুযোগ দেবেন না? 
একদিন সেই সুযোগ এল। শচীনকর্তা বললেন, ‘মানা, তোর লাইগ্যা একটা গান বানাইসি। তুই গানটা গা তো মানা ভালো করে।’ শচীনকর্তা মান্না দেকে ‘মানা’ বলে ডাকতেন।

‘মশাল’ ছবির জন্য ওই গানটি ছিল ‘উপর গগন বিশাল’। কথা ও সুরের মেলবন্ধন হয়েছিল। জনপ্রিয় হয়েছিল গানটি। এরপর অনেকগুলো বছর কেটে গেছে। মান্না দে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গেছেন গান করতে। গেয়েছেন এ গানটি। একজন ইংরেজ মহিলা এসে বললেন, ‘আপনার এ গানটি আমার ভালো লেগেছে। আমি গানের কথাগুলো একটু লিখে নিতে চাই।’

 ‘আপনি কি হিন্দি ভাষা বোঝেন?’
 ‘না, বুঝি না। দয়া করে অর্থও বুঝিয়ে দিন।’

বুঝিয়ে দিলেন মান্না। মহিলা বললেন, ‘এই গানের কথা ও মানে বুঝে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি এমনিতেই কিছুটা বুঝে নিতে পেরেছিলাম আপনার গান শুনে আর গানের ভেতর গায়কির আবেদনে।’মান্না অনুভব করলেন, সুরের আবেদন, গানের আবেদন গানের ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ঠিক কথায় ঠিক কথা বসলে তা ছড়িয়ে যায়। 

সূত্র: মান্না দে, জীবনের জলসাঘরে, পৃষ্ঠা ১৩৩-১৩৫

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত