Ajker Patrika

তামাক এবং ইত্যাদি

সম্পাদকীয়
তামাক এবং ইত্যাদি

তামাক দিয়ে শুধু বিড়ি, সিগারেটই তৈরি হয় না, বরং জর্দা, গুল, চুরুট, হুক্কা ইত্যাদি তৈরি হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায়, এ দুই ধরনের তামাকই দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় ৭ হাজারের বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যার মধ্যে ৭০টি রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ক্যানসার হওয়ার জন্য দায়ী।

আজকের পত্রিকায় রোববার ‘তামাকজনিত রোগে দিনে প্রাণ হারায় ৪৪২ জন’ শিরোনামে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা আমাদের কিছুটা হলেও আতঙ্কগ্রস্ত করবে। তবে এ থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে, তা নিয়ে ভাবাই হবে জরুরি কাজ।

তামাকজনিত রোগের ক্ষতির কথা বলে শেষ করা যাবে না। তামাক পাতায় পাঁচ হাজার টক্সিন থাকে; বিশেষ করে নিকোটিন মানবশরীরে প্রবেশ করে নানাবিধ জটিল রোগ তৈরি করে। একই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস করে। টোব্যাকো অ্যাটলাস ২০১৮-এর জরিপ মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। অন্যদিকে ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ধূমপান না করেও বিভিন্নভাবে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। তবে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যেও ৭ শতাংশ তামাকের ব্যবহার করে থাকে।

সরকার তামাকপণ্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন এসব পণ্যে শুল্কহার বৃদ্ধি করেছে, বিভিন্ন ধরনের মিডিয়ায় তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহার (নিরোধ) আইন ২০০৫ প্রণয়ন করেছে। আইন মতে, পাবলিক পরিবহন এবং খোলামেলা স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ হলেও হরহামেশাই অনেককে এসব স্থানে ধূমপান করতে দেখা যায়। ফলে চারপাশের যাত্রী ও পথচারীরাও তামাকজাত পণ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার আইন অনুযায়ী, অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। এ দেশের সর্বত্র সবার কাছে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। তাই শুধু আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, এর যথার্থ বাস্তবায়ন করা জরুরি।

পাশাপাশি সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর বাস্তবায়নের জন্য তামাক কোম্পানির আয় থেকে নির্ভরতা কমাতে হবে। কারণ এক গবেষণায় দেখা গেছে, সরকার তামাক থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে, এর চেয়ে বেশি ব্যয় হয় এর ব্যবহারজনিত রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য।

তাই সরকারকে সমন্বিত ও কার্যকর তামাক কর নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। কর নীতিমালায়, বিশেষ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে তামাক কোম্পানির প্রতি আনুকূল্য দেখানো বন্ধ করতে হবে। তামাকজাত দ্রব্যের খুচরা মূল্য বাড়ালে আর তামাক নিয়ন্ত্রণের যেকোনো কাজে তামাক কোম্পানির অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করলে, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কিন্তু সহজ হবে।

তামাকের অপব্যবহার প্রতিরোধ করার জন্য জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে এর নিরোধে ব্যক্তির সচেতনতার পাশাপাশি সম্মিলিত প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত