Ajker Patrika

১৬ কোটি টাকা নিয়ে উধাও প্রতারক চক্র

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ২২
১৬ কোটি টাকা নিয়ে উধাও প্রতারক চক্র

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে অনলাইনে আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে প্রায় ১৬ কোটি টাকা নিয়ে ৭ যুবকের একটি প্রতারক চক্র উধাও হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিন মাসে প্রায় দুই হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে তাঁরা এ টাকা হাতিয়ে নেন। সম্প্রতি ঘটনাটি ফাঁস হলে তাঁরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়নের ইমরান হোসেন ফারাবি, ইকরামুল কবির, আমিন আহমেদ জুয়েল ও উজ্জ্বল বালেষ্টর, মহসিন কবির, মো. আনাছ ও মো. নোমান। তাঁদের মধ্যে কলেজছাত্র ফারাবি ও উজ্জ্বল ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। জুয়েল হায়দরগঞ্জ বাংলাবাজারের নিউ তৃষা ডিজিটাল স্টুডিও অ্যান্ড টেলিকমের মালিক। কবির ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁদের এ ঘটনা ফাঁস হলে জুয়েল দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যান। রোমানিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছেন ফারাবি।

সরেজমিনে জানা গেছে, প্রতারক চক্রটি প্রথমে গুগল প্লে স্টোরে এসপিসি, এসপিএল, সিএফসি, পিএমসি এবং সর্বশেষ ড্রিম শপ লিমিটেড নামের সফটওয়্যার চালু করে। এগুলোতে একটি হিসাব খোলার জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে ফারাবি নগদে ১ হাজার ৯০০ টাকা নিতেন।

নতুন হিসাবে প্রতিদিন দুটি করে ভিডিও বিজ্ঞাপন আসে। ওই ভিডিওগুলো দেখলে ২০ টাকা করে আয় যোগ হতো। এভাবে প্রতি মাসে একটি হিসাবে ৬০০ টাকা আসত। প্রথম দিকে কিছু গ্রাহককে লোভ দেখাতে টাকা তোলার সুযোগ দিলেও তিন মাস পর সুযোগটি বন্ধ করে দেন। এভাবে প্রায় দুই হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে তাঁরা ১৫-১৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে ইমরান হোসেন ফারাবি বলেন, ‘পরিস্থিতির কারণে আমি এলাকার বাইরে আছি। আমাদের বিরুদ্ধে আনা আত্মসাতের অভিযোগগুলো সঠিক নয়। সফটওয়্যার বন্ধ থাকায় লেনদেন বন্ধ রয়েছে। জুয়েল দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় আমরা বিপদে পড়েছি। আমার আয় দিয়ে আমি বাড়ি-গাড়ি করেছি বলে অনেকেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন।’

এ চক্রের পাল্লায় পড়ে ৭ লাখ টাকা খুইয়েছেন হায়দরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন (৩০)। তিনি বলেন, ‘চক্রটির প্রধান হচ্ছেন ইমরান হোসেন ফারাবি। তিনিসহ অন্যরা মিলে ড্রিম শপ তৈরি করে আমাদের মতো অসংখ্য লোককে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছেন। যে ফারাবি ১০০ টাকা হাতখরচ করতে পারতেন না, তিন হঠাৎ ৫ লাখ টাকার মোটরসাইকেল কিনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করেন। কোম্পানি থেকে এগুলো দেওয়া হয়েছে বলে ফারাবি ও কবির প্রচার করতে থাকেন। তাঁদের হঠাৎ পরিবর্তনে বেশি লাভের আশায় লোকজন শত শত হিসাব খুলতে থাকেন। তাঁরা একটির পর একটি সফটওয়্যার তৈরি ও বন্ধ করে প্রতারণার জাল বোনেন।’

টাকা আত্মসাতের ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ফাহিম কাদের (৩৪)। ফাহিম কাদের বলেন, ‘৭ যুবকের এ চক্রটি শুধু হায়দরগঞ্জ বাজার এলাকা থেকেই হাতিয়ে নিয়েছেন ১৫-১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ কোটি টাকা দিয়ে জুয়েল দক্ষিণ আফ্রিকায় সুপারশপ তৈরি করেছেন। ফারাবি হাতিয়ে নিয়েছেন ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ইমরান কবির নিয়েছেন ৭৫-৮০ লাখ টাকা। মামলা করায় তাঁরা আমাকে হুমকি দিচ্ছেন।’

ফারাবির প্রতারণা থেকে রক্ষা পাননি তাঁর আত্মীয়স্বজনেরাও। তাঁর বেয়াই (ভগ্নিপতির ভাই) আবদুল হালিমের কাছ থেকেও ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। হালিম বলেন, ‘ফারাবি এতটাই ধূর্ত ও প্রতারক, তা আমরা আগে বুঝিনি। আমাদের টাকা দিয়ে দিচ্ছেন বলেও তিনি দিচ্ছেন না।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি লক্ষ্মীপুরের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। দ্রুত আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত