Ajker Patrika

আমাদের শিক্ষালয়

সম্পাদকীয়
আমাদের শিক্ষালয়

শিক্ষা আদতেই একটি জাতির জন্য জরুরি কি না, তা নিয়েই যেন ভাবতে হচ্ছে। ভাবনাটা মাথায় এল খাগড়াছড়ির স্কুলগুলোর দুর্দশাসংক্রান্ত একটি খবরে চোখ রাখার পর। আমরা মূলত কোন দিকে নজর দিচ্ছি, কোন দিকটি অবহেলা করছি, সে-সম্পর্কে আমাদের খুব বেশি মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।

জাতির মানস গঠনে শিক্ষার ভূমিকা নিয়ে একটা ‘লেকচার’ দেওয়া হলে তাতে আমাদের ক্ষমতার শীর্ষচূড়ায় বোধের আলোড়ন হবে, সে বিশ্বাসে বলীয়ান হওয়ার সংগত কোনো কারণ নেই। শিক্ষাকে যদি তার ঠিক মূল্য না দেওয়া হয়, তাহলে আলোকিত মানুষ সৃষ্টি হওয়া কঠিন।

আজকের পত্রিকার সংবাদটি অবশ্য স্কুলে শিক্ষক-সংকট বিষয়ে। এক একটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পড়াচ্ছেন দুজন শিক্ষক। যে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১০ জন, সেই স্কুলে কী করে দুজন শিক্ষক বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে পড়াবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর কি পাওয়া যাবে? অথচ দিনের পর দিন দিব্যি এভাবেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। খাগড়াছড়িতে দুই শিক্ষক দিয়ে চলা স্কুলের সংখ্যা ২৭টি। এর মধ্যে মানিকছড়িতে রয়েছে ৭টি। মানিকছড়ি এলাকার ভুদংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে তো শিক্ষকদ্বয়ের ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। দুটি শ্রেণিকে এক ঘরে এনে পড়িয়েও তো পার পাওয়া যায় না।

কতগুলো ক্লাস নেওয়া যায় এভাবে? আর একটার পর একটা ক্লাস নিলে সেই ক্লাসের গুণগত মান কি থাকে আর? মামলা-জটিলতায় নাকি ২৫৮ জন শিক্ষকের নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্থগিত আছে। এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। শিক্ষককে পৌঁছাতে হবে শিক্ষার্থীর কাছে, এটাই পরম সত্য।

আধুনিক শিক্ষায় অনেক নতুন কিছু যোগ হয়েছে। কারিগরি উন্নতির ফলে শিক্ষার উপকরণেও এসেছে পরিবর্তন। মাল্টিমিডিয়াসহ নানা কিছু এসে শিক্ষা বিস্তারে সহায়ক হয়েছে। কিন্তু এর সুফল আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছায় না। শিক্ষালাভের সঙ্গে আনন্দের যে প্রাথমিক সম্পর্ক রয়েছে, সে কথাই তো আমরা ভুলতে বসেছি।

শিক্ষার ভিত গড়ে উঠতে হয় প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এ সময় শিশুর মনকে গড়ে তোলার অসাধারণ সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু দেখা যায়, শিশুদের মানসিক ও মানবিক বিকাশের এই সময়টাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। স্কুল পর্যায়ে সরকারি শিক্ষকেরা যে বেতন পান, তা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টকর, পাঠদানে কীভাবে তিনি সৃজনশীল হবেন? শিক্ষক যদি নির্ভার হয়ে পাঠদান করতে না পারেন, তাহলে তিনি শিশুকে একটি নান্দনিক জীবনের সঙ্গে কীভাবে পরিচিত করাবেন? বইয়ে লেখা অক্ষরগুলোর সৃষ্টি হয়েছে জীবনে তা প্রয়োগ করার জন্য। কিন্তু জীবনের সঙ্গে বইয়ের অক্ষরগুলোর কি যোগাযোগ আছে?

আলোচনাটি ছড়িয়ে দিলাম এই জন্য যে একটি বিদ্যালয়ে দুজন শিক্ষক থাকা যেমন কাজের কথা নয়, তেমনি এ কথাও বোঝা দরকার, শিশুর মানস গঠনের জন্য শিক্ষার যে পরিবেশ গড়ে তোলার কথা, সেটাও হয়ে উঠবে না, যদি না শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা হয়।

মানিকছড়ির ভুদংপাড়া তো একা এই সংকট মোকাবিলা করছে না। সংকট গোটা শিক্ষা-ভাবনার। সেখানেই সংস্কার জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত