Ajker Patrika

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃত্বের দ্বন্দ্বে আটকে একক ভর্তি পরীক্ষা

রাহুল শর্মা, ঢাকা
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ১৫
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃত্বের দ্বন্দ্বে আটকে একক ভর্তি পরীক্ষা

সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘একক’ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ আগামী বছরও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একক ভর্তি পরীক্ষার আওতায় নিতে গত ১৫ এপ্রিল প্রজ্ঞাপনও জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনীহা, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব, একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের খসড়া অধ্যাদেশের অসংগতিসহ নানা কারণে ফের আটকে গেল উদ্যোগটি। 

সূত্রমতে, গত ৩১ অক্টোবর ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্নাতক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইউজিসি।

এরপর ২৮ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে ইউজিসিকে জানানো হয়, অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করা ‘সম্ভব নয়’। 
চিঠিতে ইউজিসির ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্নাতক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ নামে যে কমিটি হবে, তার চেয়ারম্যান হবেন ইউজিসির চেয়ারম্যান; যিনি এরই মধ্যে বিধিবদ্ধ সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত। এ পরিপ্রেক্ষিতে তার আরেকটি কর্তৃপক্ষের প্রধানের দায়িত্ব পালন করা সমীচীন হবে না। 

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. আবু ইউসুফ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, একক ভর্তি পরীক্ষা নিতে অধ্যাদেশের কী দরকার? অধ্যাদেশ ছাড়া কি এত দিন ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি? গত বছরও তো ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে, এবারও হবে। 

উদ্যোগটি আটকে দেওয়ার কারণ সম্পর্কে ইউজিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এর কারণ মোটা দাগে দুটি। একটি হলো বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনীহা, অন্যটি ইউজিসির সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল হওয়ার শঙ্কা। তিনি আরও বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতির বাইরে থাকা কয়েকটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ করেছিল ইউজিসি। এতে নাখোশ হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারণ এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকাই রাখা হয়নি। 

ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পত্র অনুযায়ী, এখন ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) কর্তৃপক্ষ গঠনের সব কাজ শুরু করবে ইউজিসি। তবে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। এর আগে পর্যন্ত বর্তমানে যেভাবে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে, সেভাবেই হবে। 

আগে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নিত। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের দেশের দূরদূরান্তে গিয়ে একাধিক ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হতো। এতে ভোগান্তির সঙ্গে খরচও বাড়ত। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ক্ষোভ ছিল।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথম গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এতে অংশ নেয় কৃষি ও কৃষি শিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ব্যবস্থায় একটি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী তাঁর যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী গুচ্ছে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন।

বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫টি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১৩টি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হয়। তবে ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছভুক্ত হয়; তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েট) আরেকটি গুচ্ছে এবং কৃষি ও কৃষি শিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় অন্য একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত