Ajker Patrika

দলবদ্ধ ধর্ষণ

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮: ২১
দলবদ্ধ ধর্ষণ

আবার দলবদ্ধ ধর্ষণ। নরসিংদীর পলাশে ঘুরতে এসেছিলেন স্বামী-স্ত্রী। স্বামীকে পিটিয়ে তাঁর সামনেই ধর্ষণ করা হয়েছে স্ত্রীকে। এ ধরনের নির্মম ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। কক্সবাজার, গাজীপুরের শ্রীপুর, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, নোয়াখালী, নাটোরসহ আরও কয়েক জায়গায় অল্প সময়ের মধ্যে এ ধরনের নির্মমতার কথা জানা গেছে।

কেন একদল মানুষ একজন নারীকে ধর্ষণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে, সেটা নিয়ে সমাজতাত্ত্বিকেরা ভেবে দেখতে পারেন। কোন মানসিকতা এই অপরাধের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কাউকে কাউকে, তার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। এ ধরনের আচরণের পেছনে বেকারত্ব, ক্ষমতা, ক্ষমতাবানদের সঙ্গে আঁতাত, অপরাধ করেও শাস্তি না পাওয়ার অভিজ্ঞতা ইত্যাদি নানা কারণই থাকতে পারে। তবে প্রবণতাটি যে ভয়াবহ এবং এভাবে ঘটতে থাকলে তা যে সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে পারে, সেই শঙ্কা এড়ানো যাচ্ছে না।

পত্রিকায় ছাপা হয়, রেডিও-টেলিভিশনে প্রচার হয় এই ঘটনাগুলো। সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা হয়। ফলে ঘটনাগুলোর বর্ণনাও কাউকে কাউকে এই অপরাধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। খবর ছাপলে তা মানুষ পড়ে। চমকপ্রদ খবরের প্রতি পাঠক বা দর্শক-শ্রোতার আকর্ষণ অনেক বেশি। খবর পড়ে, শুনে, দেখে তা থেকে নিজের মতোই কর্মপন্থা আবিষ্কার করে ফেলেন পাঠক-শ্রোতা-দর্শক। চমকপ্রদ খবর পড়ে সে ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

কিছু ঘটলে সেই সংবাদ দেশবাসীকে জানানো সাংবাদিকদের কর্তব্য। তবে সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব আছে, সংবাদ পরিবেশনের ভঙ্গি ঠিক আছে কি না, তা দেখার। এ ধরনের অপরাধ যারা ঘটায়, তারা শাস্তি পাচ্ছে কি না, সে খবরটা পরে আর সেভাবে প্রচারিত হয় না। কিংবা চমকপ্রদ খবরের আকর্ষণের কাছে শাস্তির খবরের আকর্ষণ ম্লান হয়ে যায়। কখনো কখনো অপরাধীরা শাস্তিও পায় না।

শাস্তি দিয়ে হয়তো নির্দিষ্ট অপরাধীর বিচার সম্পন্ন হয়। কিন্তু যাঁরা এখনো অপরাধ ঘটাননি, কিন্তু অপরাধ ঘটানোর মওকা খুঁজছেন, তাঁদের কীভাবে চিহ্নিত করা যাবে? তাঁদের শরীরে তো সে রকম কোনো চিহ্ন নেই, চিহ্ন নেই চেহারায়ও। তাই অপরাধ সংঘটনের পরই কেবল তা জানা যায়।

এই অশ্লীল নির্মমতা থেকে বেরিয়ে আসার একটা পথ রয়েছে সামাজিক সচেতনতার ভেতর। সমাজে যাঁরা গণ্যমান্য, তাঁরা নিজ এলাকার মানুষকে দিকনির্দেশক হয়ে উঠতে পারেন। তাঁরা এমন বার্তা দিতে পারেন যে কেউ এ ধরনের নৃশংসতা করলে সমাজে তাঁর ঠাঁই হবে না। এলাকার শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব যে সবার, সেটা বোঝাতে হবে। এলাকার শান্তিরক্ষা বাহিনী বা পুলিশকে হতে হবে তৎপর। বিপদ ঘটে তখনই, যখন সমাজ অধিপতি বা সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষার দায় যাঁদের, তাঁদের মধ্যেও অপরাধের প্রতি প্রশ্রয়ের মনোভাব দেখা যায়। এটা কাটিয়ে উঠতে না পারলে অস্বাভাবিক ঘটনার লাগাম টেনে ধরা যাবে না। মূল দায়টা সমাজপতিদেরই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত