Ajker Patrika

পরিণয়

সম্পাদকীয়
পরিণয়

‘ও বনের পাখি’ গানটা তখন লোকের মুখে মুখে। সে গানটি ছিল ‘কাশীনাথ’ সিনেমায়। বেলা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে গানটি মানুষের মন কেড়েছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অবশ্য বেলাকে চিনতেন আরেকটু আগে থেকে। বেলা আর ওঁর বোন আভা তখন রেডিওতে নিয়মিত গান গাইতেন। তাঁরা হেমন্তকে তাঁদের বাড়ি নিয়ে যেতেন। তাঁদের মা খুব ভালোবাসতেন হেমন্তকে। বলতেন, ‘মাথার ওপর কেউ নেই। তুমি একটু দেখাশোনা কোরো। ছেলেমানুষ, এখনো বুদ্ধিসুদ্ধি হয়নি। দরকার হলে এদের শাসন কোরো।’

হেমন্ত হয়ে গেলেন বাপহারা বেলা ও তাঁর ভাইবোনদের অভিভাবক। চার বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে বেলাই সবার বড়। সংসারের হাল তাঁকেই ধরতে হয়েছে। ভাইবোনদের খুব ভালোবাসতেন। এ সময় বোম্বেতে গান গাওয়ার জন্য ডাক পড়ল বেলার। সে সময়কার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক ক্ষেমচাঁদ প্রকাশ বেলাকে দিয়ে ছবিতে প্লেব্যাক করাতে চান। কিন্তু কার সঙ্গে যাবেন বেলা? বেলার মা বললেন, ‘মেয়েকে পাঠাতে পারি, যদি তুমি সঙ্গে যাও।’

রাজি না হয়ে উপায় ছিল না। এত বড় সুযোগ হাতে না নিলে তা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সালটা ১৯৪৪। বোম্বেতে প্রমথেশ বড়ুয়া হেমন্তকে বললেন তাঁর সঙ্গে কলকাতায় যেতে। দুজন মিলে ছবির গানে সুর করবেন। দুজনের নামই যাবে সুরকার হিসেবে। বেলাকে তাঁর এক আত্মীয়ের কাছে রেখে ফিরে এলেন হেমন্ত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড়ুয়া সাহেব হেমন্তকে নিতে পারলেন না। খুব কষ্ট হলো হেমন্তের। এদিকে মাস তিনেক পর মায়ের অসুখের খবর পেয়ে বেলা ফিরে এলেন কলকাতায়। কিন্তু মা বাঁচলেন না। বেলার কান্না আর থামানো যায় না।

তখন হেমন্ত সিদ্ধান্ত নিলেন, এই পরিবারকে দেখতে হবে। বেলাকে বিয়ে করলে পাঁচজনের মুখ বন্ধ করা যাবে। মা-বাবার কাছে সে কথা বলায় তাঁরা রাজি হয়ে গেলেন। ১৯৪৫ সালের ৭ ডিসেম্বর বিয়ে হয়ে গেল হেমন্ত আর বেলার। শুরু হলো নতুন জীবন। 

সূত্র: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আনন্দধারা, পৃষ্ঠা ৪২-৪৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত