Ajker Patrika

আবারও কিশোর গ্যাং

সম্পাদকীয়
আবারও কিশোর গ্যাং

দেশে অপরাধ ও অপরাধীর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। মানুষের ক্রোধ, নিষ্ঠুরতা ও প্রতিহিংসাপ্রবণতা কেন এত বাড়ছে, তা নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনার সময় এসেছে; বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার খবর উদ্বিগ্ন হওয়ার মতোই।

১৯ এপ্রিল আজকের পত্রিকায় নোয়াখালীর সেনবাগে দুই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের সংঘর্ষে মাজহারুল ইসলাম শাওন (১৮) নামে একজনের মৃত্যুর খবর ছাপা হয়েছে।

প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এক নারীকে নিয়ে বিবাদ এবং বাজারে অবৈধভাবে বৈশাখী মেলা বসানোকে কেন্দ্র করে দুই কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে বিরোধের জেরে ১৭ এপ্রিল রাতে প্রতিপক্ষ কিশোর গ্যাংয়ের ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য শাওনকে কোপায়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে দাগনভূঞা সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ফেনী সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

অতিসম্প্রতি চট্টগ্রাম শহরে কিশোর গ্যাংয়ের আক্রমণে একজন চিকিৎসকের নিহত হওয়ার কথাও প্রসঙ্গত মনে পড়ছে। কিশোর গ্যাং বিভিন্ন স্থানেই ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত করে আইনশৃঙ্খলার আওতায় আসছে, গণমাধ্যমে খবর হচ্ছে। খুনখারাবির মতো মারাত্মক ঘটনার পরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, অমুক কিশোর গ্যাং দুই-তিন বছর ধরে ওই এলাকায় দাপাচ্ছিল। প্রশ্ন হলো, এই কিশোর গ্যাংয়ের দাপিয়ে বেড়ানোর বিষয়টি অভিভাবক ও পুলিশের চোখে পড়ে না কেন?

কিশোর গ্যাং তৈরি এবং তাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া তো একটি বড় সামাজিক সমস্যা। অভিভাবক, সমাজের স্থানীয় নেতারা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন বখে যাওয়া কিশোরদের নিবৃত্ত করার বিষয়টি উপেক্ষা করে? পরিবার ও অভিভাবকদের উদাসীনতা কিংবা প্রশ্রয়েই কি কিশোরেরা বেপরোয়া ও বেপথু হচ্ছে না? সবকিছু থানা-পুলিশের ওপর ছেড়ে দেওয়া কোনো সজীব সমাজের লক্ষণ নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, কিশোর গ্যাং সমস্যা মোকাবিলায় এদের প্রতি সাধারণ অপরাধীদের থেকে ভিন্ন কৌশল নিতে হবে; অর্থাৎ তাতে সহানুভূতি ও সংবেদনশীলতা থাকবে। তিনি সঠিক কথাই বলেছেন। প্রশাসন ও পুলিশ কি প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেশ অনুসরণ করবে? প্রধানমন্ত্রীর এমন পরামর্শের পরও পুলিশ যদি কিশোর অপরাধ দমনে গতানুগতিক পথেই হাঁটে, তাহলে তা হবে দুঃখজনক। সমাজপতি ও নাগরিক নেতারাও নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসুন।

আরেকটি খুন ও থানায় মামলার জন্য অপেক্ষা না করে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে বড় ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন। অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজপতি ও নাগরিক নেতারা একযোগে এগিয়ে না এলে সামাজিক এই ব্যাধির নিরাময় সম্ভব হবে না।

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ধারালো ছুরি হাতে দাপিয়ে বেড়ানো কিশোর-তরুণ খুনিদের সমস্যাটি কয়েক বছর ধরে বিপজ্জনক মাত্রায় উঠে আন্তর্জাতিক খবর হয়। ‘নাইফ ক্রাইম’ প্রপঞ্চটি নিয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক করে তারা বিভিন্ন গবেষণা, আইন সংস্কার, তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের বিশেষ কর্মসূচি প্রভৃতি পদক্ষেপ নিয়ে কমিয়ে এনেছে। আমাদের এ সমস্যাটি এখনো যুক্তরাজ্যের মতো বড় হয়নি। তাই বসে না থেকে প্রতিকারের কাজটি এখনই শুরু করা হোক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত