Ajker Patrika

নিষিদ্ধতার ফেরে

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৭ জুন ২০২২, ১০: ২১
নিষিদ্ধতার ফেরে

ব্রিটিশ আমলে রবীন্দ্রনাথের কোনো বই বাজেয়াপ্ত হয়নি। তাঁর আগে-পিছে অনেক লেখকের বইই বাজেয়াপ্ত করেছে ব্রিটিশ সরকার। তাহলে কি রবীন্দ্রনাথকে বিপজ্জনক বলে মনে করত না তারা? ইতিহাস জানাচ্ছে, রবীন্দ্রনাথের জনপ্রিয়তা ও সর্বমহলে জনপ্রিয়তার কারণে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে ভয় পেয়েছে ব্রিটিশরা। ভেবেছে, তাঁর কোনো বই নিষিদ্ধ করলে যে প্রবল প্রতিক্রিয়া হবে, তা ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে সামাল দেওয়া দুষ্কর হয়ে উঠতে পারে। তবে রবীন্দ্রনাথের ‘রাশিয়ার চিঠি’ সম্পর্কে গোয়েন্দারা নোট দিয়েছিল, ‘আপত্তিকর’।

রবীন্দ্রনাথের বই নিষিদ্ধ হয়নি বটে, কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা অনেকের বই বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিদ্রোহী রবীন্দ্রনাথ’ বইটি নিষিদ্ধ হয় ১৯৩২ সালে। ১৯৩৬ সালে ‘সর্বহারার দৃষ্টিতে রাশিয়ার চিঠি’ নিষিদ্ধ হয়। হীরালাল সেন লিখিত ‘হুঙ্কার’ নামে একটি নিষিদ্ধ বই রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করা হয়েছে বলে সমন জারি করে কবিকে খুলনার আদালতে হাজির হতে বাধ্য করা হয়েছিল। বইটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ১৯১১ সালে। রবীন্দ্রনাথ জানতেন না, তাঁকে বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে।

হীরালাল সেনের প্রতি মোটেই বিরক্ত হননি রবীন্দ্রনাথ। তিনি এত বড় ঝঞ্ঝাটের পরও হীরালাল সেনকে শান্তিনিকেতনে শিক্ষকতার কাজ দেন। তাতে খুশি হয়নি পুলিশ। এরপর শান্তিনিকেতনের ওপর পুলিশি উৎপাত এতটাই বেড়ে যায় যে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে জমিদারি দেখাশোনার ভার দেন।

ঘটনাটি জানা যায় স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত ভারতপ্রেমিকা মিস ম্যাকলাউডকে লেখা রবীন্দ্রনাথের একটি চিঠি থেকে। মিস ম্যাকলাউড বিপ্লবী ভুপেন্দ্রনাথ দত্তকে রবীন্দ্রনাথের বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ইলিনয় থেকে সে চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন ১৯১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর। ইংরেজিতে লেখা সে চিঠিতে তিনি এক জায়গায় বলেছেন, ‘নিষিদ্ধ বইয়ের এক লেখককে আমি চাকরি দিয়েছিলাম, যেন সে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এমন কিছু শুরু করল, যাতে আমার বিদ্যালয়টি নষ্ট হবার জোগাড়। তাই আমি তাঁকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়েছি।’

সূত্র: শিশির কর, ব্রিটিশ শাসনে বাজেয়াপ্ত বাংলা বই, পৃষ্ঠা ১০২-১০৩

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত