Ajker Patrika

মুরাদনগরে এক পরিবারের সাত ভুয়া চিকিৎসক

মুরাদনগর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ০২
মুরাদনগরে এক পরিবারের সাত ভুয়া  চিকিৎসক

মুরাদনগর উপজেলার বাসিন্দা বিউটি আক্তার। তাঁর ৯ বছরের মেয়ে মিমের হঠাৎ জ্বর ও হাঁটুব্যথা দেখা দেয়। তিনি শিশুকন্যাকে স্থানীয় হাবিবুর রহমানের ওষুধের দোকানে নিয়ে যান। হাবিবুর রহমান এলাকায় নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দেন। বিউটি আক্তার সেই সরল বিশ্বাসে হাবিবের দেওয়া দুই প্রকারের অ্যান্টিবায়োটিকসহ সাত প্রকারের ওষুধ মেয়েকে খাওয়ান।

ওই ওষুধ খেয়ে মিম আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে মিমের শরীরে। ঘটনাটি গত ৪ সেপ্টেম্বরের। এরপর থেকে মিম আগের মতো আর কথা বলতে পারছে না।

মা বিউটি আক্তার ও নানা মোবারক হোসেন বলেন, তাঁরা থানায় অভিযোগ করতে চেয়েছেন। কিন্তু খবর পেয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।

মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের বল্লবদী গ্রামের শুধু হাবিবুর রহমান নন তাঁর বাবা খলিলুর রহমান এবং পাঁচ ভাই সফিউল্লাহ মোল্লা, সোলায়মান মোল্লা, কাইয়ুম মোল্লা, কারি মোল্লা ও হারিছ মোল্লার ওই গ্রামে রয়েছে পাঁচটি ওষুধের দোকান। তাঁরা নিজেদের চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন। নামের আগে লেখেন ‘ডা.’। অথচ সরেজমিনে তাঁরা কেউ এ প্রতিবেদককে সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের কোনো সনদ এবং ড্রাগ লাইসেন্স দেখাতে পারেননি।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, অসচেতন ও অসহায় মানুষকে চিকিৎসার ফাঁদে ফেলছে ওই পরিবার। তারা ওষুধের মোড়কের নির্ধারিত দামের বেশি দাম রাখে। অথচ গ্রামের কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না।

এলাকাবাসী জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন খলিলুর রহমান বড়ইয়াকুড়ি গ্রামের শ্রী কামার কর্মকারের চোখের চিকিৎসা করতে গিয়ে সুইয়ের খোঁচা লাগিয়ে দেন। এরপর তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান।

রানীমুহুরী গ্রামের জুনাব আলীর স্ত্রী খোরশেদা বলেন, ‘আমার স্বামীর শরিলডা খারাপ লাগে কইয়া খলিল ডাক্তারের পুত সোলায়মানের দোকান গেছে। হেনো যাওয়ার পর কি জানি একটা ইনজেকশন দিছে। আমার স্বামী বাড়িতে আইয়া লগে লগে হাডইস্টক কইরা মইরা গেছেগা। পরে আমি জিজ্ঞাস করনে আমারে কয় হায়াত নাই মইরা গেছেগা। অহন আমার ছোট একটা ছেলে আর চাইডা মাইয়া লইয়া মানুষের বাড়িতে কাম কইরা খাইয়া না খাইয়া দিন কাটান লাগে।’

অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করলেও আমি কোনো প্রেসক্রিপশন দিই না। শুধু আমি না, এলাকায় খবর নিয়ে দেখেন সবাই লেখে। আমার সব প্রকার কাগজপত্র আছে। তবে এই মুহূর্তে সঙ্গে নেই।’ মিমের ভুল চিকিৎসার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার চিকিৎসায় সে অসুস্থ হয় নাই। আর আমি এত ওষুধ তাকে দিই নাই। আমার পরিবারের বদনাম করতে তারা এই কাজ করছে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন, ‘প্রথমত একটা শিশুকে একসঙ্গে দুইটা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া ঠিক না। আর কোনো প্রকার সনদপত্রবিহীন কেউ চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে পারবে না। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে।’

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান বলেন, ‘থানায় অভিযোগ নিয়ে আসতে দিচ্ছে না এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে খবর নিয়ে দেখছি। যদি সত্যতা পাওয়া যায়, অবশ্যই ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত