মাসুদ রানা
বাংলাদেশে দিন দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এ সমস্যা সমাধানে সড়কে শৃঙ্খলায় আনা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো এবং দুর্ঘটনাকেন্দ্রিক অপরাধের বিচার ও শাস্তি প্রদানে একটি কার্যকর আইনের প্রত্যাশা দীর্ঘদিনের। দীর্ঘ চার বছর পর সম্প্রতি সড়ক আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইনের বিষয়ে কথা বলার আগে আমরা একটু ফিরে যাই ২০১৮ সালের ঘটনার কাছে।
বাংলাদেশে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছিল ২০১৮ সালে। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল সে বছরের ২৯ জুলাই। সেদিন রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের মাধ্যমে শুরু হওয়া আন্দোলন পরবর্তীকালে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ১ থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে অসংখ্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ৯ দফা দাবিতে সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
শিক্ষার্থীরা নিজের কাঁধে এমনভাবে দায়িত্ব তুলে নিয়েছিল, যা এর আগে কেউ দেখেনি। ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নজির স্থাপন করেছিল শিক্ষার্থীরা।
তারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে গাড়ি আটকে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস সনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র পরীক্ষা করেছিল। আর লাইসেন্সহীন চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো ট্রাফিক পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে মামলা নিতে বাধ্য করেছিল। শিক্ষার্থীরা লাইসেন্সবিহীন এবং ট্রাফিক আইন ভঙ্গের কারণে মন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি আটকে দিয়েছিল। সড়কের গাড়িগুলোকে তারা লেন অনুসারে পরিচালনা করেছিল। যেমন অ্যাম্বুলেন্স ও অগ্নিনির্বাপণ গাড়ির জন্য করেছিল ইমার্জেন্সি লেন। এভাবে সড়কের বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাকে কোমলমতি শিশু-কিশোরেরা কয়েক দিনের মধ্যে সুশৃঙ্খল করে তুলতে সক্ষম হয়েছিল।
সেই সময় শিশু-কিশোরদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার অনেকটা তড়িঘড়ি করে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাস করেছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সে আইন আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পর বিধিমালাটি এখন যাচাইয়ের (ভেটিংয়ের) জন্য পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে।
ছাত্র আন্দোলনের পর নিরাপদ সড়কের জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই বিধিমালা কার্যকরের পরও সড়ক পরিবহন আইনটি খুব একটা কাজে আসবে না। কারণ শিশু-কিশোরদের সেই সময়ের যৌক্তিক ও প্রাণের দাবির ৯ দফার দাবিগুলো কি উপেক্ষিতই থেকে গেল না?
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ১ নম্বর দাবি ছিল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা। ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। যদিও আইনটির সংশোধনীতে জরিমানার পরিমাণ ৫ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছিল ফিটনেসবিহীন ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করা। এখনো সড়কে অবাধে চলাচল করছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন।
ছাত্র আন্দোলনের পর পাস করা সড়ক পরিবহন আইনে লাইসেন্স ছাড়া মোটরযান চালানোর শাস্তি ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বর্তমান আইনটির সংশোধনীতে এ জরিমানা ১৫ হাজারে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
দুঃখজনক বিষয় হলো, বিধিমালায় চালকদের দক্ষতা, ফুটপাত হকারমুক্ত রাখা, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে মানুষকে সচেতন করা, বাসস্টপেজ তৈরি, অবৈধ পার্কিং বন্ধ, ট্রাফিক সিগন্যালের উন্নয়নসহ অনেক বিষয় আমলেই নেওয়া হয়নি।
সুস্থ ও স্বাভাবিক কোনো গাড়ির চালকই রাস্তায় ইচ্ছে করে দুর্ঘটনা ঘটাতে চান না। কিন্তু বাস্তবে সড়কে অনুকূল অবস্থা না থাকা, ফিটনেসবিহীন গাড়ির দৌরাত্ম্যের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সর্বোপরি নির্দিষ্ট শ্রমঘণ্টার পরিবর্তে মালিকেরা শ্রমিকদের চাপ দিয়ে বেশি সময় নিয়ে গাড়ি চালাতে বাধ্য করেন। এসবের বাইরে শ্রমিক ইউনিয়ন এবং নেতাদের কর্তৃত্ব পরিবহন সেক্টরে থাকার কারণেও সাধারণ শ্রমিকেরা তাঁদের কাছে অসহায়। তাই আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি পরিবহনশ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি।
লেখক: মাসুদ রানা, সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশে দিন দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এ সমস্যা সমাধানে সড়কে শৃঙ্খলায় আনা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো এবং দুর্ঘটনাকেন্দ্রিক অপরাধের বিচার ও শাস্তি প্রদানে একটি কার্যকর আইনের প্রত্যাশা দীর্ঘদিনের। দীর্ঘ চার বছর পর সম্প্রতি সড়ক আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইনের বিষয়ে কথা বলার আগে আমরা একটু ফিরে যাই ২০১৮ সালের ঘটনার কাছে।
বাংলাদেশে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছিল ২০১৮ সালে। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল সে বছরের ২৯ জুলাই। সেদিন রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের মাধ্যমে শুরু হওয়া আন্দোলন পরবর্তীকালে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ১ থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে অসংখ্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ৯ দফা দাবিতে সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
শিক্ষার্থীরা নিজের কাঁধে এমনভাবে দায়িত্ব তুলে নিয়েছিল, যা এর আগে কেউ দেখেনি। ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নজির স্থাপন করেছিল শিক্ষার্থীরা।
তারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে গাড়ি আটকে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস সনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র পরীক্ষা করেছিল। আর লাইসেন্সহীন চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো ট্রাফিক পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে মামলা নিতে বাধ্য করেছিল। শিক্ষার্থীরা লাইসেন্সবিহীন এবং ট্রাফিক আইন ভঙ্গের কারণে মন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি আটকে দিয়েছিল। সড়কের গাড়িগুলোকে তারা লেন অনুসারে পরিচালনা করেছিল। যেমন অ্যাম্বুলেন্স ও অগ্নিনির্বাপণ গাড়ির জন্য করেছিল ইমার্জেন্সি লেন। এভাবে সড়কের বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাকে কোমলমতি শিশু-কিশোরেরা কয়েক দিনের মধ্যে সুশৃঙ্খল করে তুলতে সক্ষম হয়েছিল।
সেই সময় শিশু-কিশোরদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার অনেকটা তড়িঘড়ি করে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাস করেছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সে আইন আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পর বিধিমালাটি এখন যাচাইয়ের (ভেটিংয়ের) জন্য পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে।
ছাত্র আন্দোলনের পর নিরাপদ সড়কের জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই বিধিমালা কার্যকরের পরও সড়ক পরিবহন আইনটি খুব একটা কাজে আসবে না। কারণ শিশু-কিশোরদের সেই সময়ের যৌক্তিক ও প্রাণের দাবির ৯ দফার দাবিগুলো কি উপেক্ষিতই থেকে গেল না?
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ১ নম্বর দাবি ছিল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা। ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। যদিও আইনটির সংশোধনীতে জরিমানার পরিমাণ ৫ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছিল ফিটনেসবিহীন ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করা। এখনো সড়কে অবাধে চলাচল করছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন।
ছাত্র আন্দোলনের পর পাস করা সড়ক পরিবহন আইনে লাইসেন্স ছাড়া মোটরযান চালানোর শাস্তি ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বর্তমান আইনটির সংশোধনীতে এ জরিমানা ১৫ হাজারে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
দুঃখজনক বিষয় হলো, বিধিমালায় চালকদের দক্ষতা, ফুটপাত হকারমুক্ত রাখা, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে মানুষকে সচেতন করা, বাসস্টপেজ তৈরি, অবৈধ পার্কিং বন্ধ, ট্রাফিক সিগন্যালের উন্নয়নসহ অনেক বিষয় আমলেই নেওয়া হয়নি।
সুস্থ ও স্বাভাবিক কোনো গাড়ির চালকই রাস্তায় ইচ্ছে করে দুর্ঘটনা ঘটাতে চান না। কিন্তু বাস্তবে সড়কে অনুকূল অবস্থা না থাকা, ফিটনেসবিহীন গাড়ির দৌরাত্ম্যের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সর্বোপরি নির্দিষ্ট শ্রমঘণ্টার পরিবর্তে মালিকেরা শ্রমিকদের চাপ দিয়ে বেশি সময় নিয়ে গাড়ি চালাতে বাধ্য করেন। এসবের বাইরে শ্রমিক ইউনিয়ন এবং নেতাদের কর্তৃত্ব পরিবহন সেক্টরে থাকার কারণেও সাধারণ শ্রমিকেরা তাঁদের কাছে অসহায়। তাই আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি পরিবহনশ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি।
লেখক: মাসুদ রানা, সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪