Ajker Patrika

দুই তরফা অপরাধ

সম্পাদকীয়
দুই তরফা অপরাধ

আমাদের অবক্ষয় সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দুর্নীতির সঙ্গে সামাজিক অবক্ষয় সমানুপাতিক হারে বেড়ে চলেছে। তার বড় প্রমাণ হচ্ছে বিভিন্ন ভর্তি ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। আমাদের দেশে শুধু মেডিকেলে নয়; বিসিএস, ব্যাংক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এমনকি প্রাইমারি স্কুলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন সময়ে।

মেডিকেলে যাঁরা ভর্তি হন, তাঁরা মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে সমাজে গণ্য হন। প্রকৃত মেধাবীরাই মেডিকেলে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হিসেবে দেশের মানুষের জন্য কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করবেন, সেটাই সবার চাওয়া। ১০ মার্চ বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ পরীক্ষায় আবারও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে।

আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ১১ মার্চ ‘মেডিকেল ভর্তি-প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে অতিরিক্ত সচিব’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। খবর থেকে জানা যায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নিতিশ চন্দ্র সরকারের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বর্তমানে তিনি অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে রয়েছেন। এস এম আনিস নামে তাঁর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। নিতিশ চন্দ্রকেও নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ। আর এই চক্রের আর এক সদস্য জাহিদ বর্তমানে লন্ডনে আছেন।

অভিযোগ রয়েছে, আনিসের মাধ্যমে মেডিকেলে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিভিন্ন মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়ে দিতেন নিতিশ চন্দ্র।

পরীক্ষা হলো মেধা যাচাইয়ের একটি অন্যতম উপায়। বই পড়ে এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে একজন শিক্ষার্থী কতটুকু কী শেখেন, তা যাচাই করা হয় পরীক্ষার মাধ্যমে। পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসবে, সেটা সাধারণত শিক্ষার্থীর আগাম জানার কথা নয়। কিন্তু দেখা যায়, প্রশ্নপত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত অসাধু ব্যক্তিরা মোটা টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন।

যাঁরা টাকার বিনিময়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পান এবং ভালো নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে মেডিকেলে ভর্তি হন, তাঁরা চিকিৎসক হলে মানুষকে আদৌ সুচিকিৎসা দিতে পারবেন কি? ধারণা করা যায়, মা-বাবা কিংবা অভিভাবকেরাই পরীক্ষার্থীকে লাখ লাখ টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র কিনে দেন। এখানেই তো তাঁরা জাতির ভবিষ্যৎদের বিপথ দেখিয়ে দিচ্ছেন। সমাজটা সুন্দর হবে কী করে?

আর একজন অতিরিক্ত সচিবের কাজ নিশ্চয়ই দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নয়নে ভূমিকা পালন করা। কিন্তু তিনি মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো এ রকম জঘন্য কাজটি করে ক্ষমতার অপব্যবহার করলেন।

প্রশ্নপত্র তৈরি এবং পরীক্ষার হলে পৌঁছানো পর্যন্ত এর সঙ্গে কারা যুক্ত থাকেন এবং প্রশ্ন প্রণয়ন কমিটি কতটুকু বিশ্বস্ত, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। প্রকৃত অপরাধীদের আইনি প্রক্রিয়ায়  সময়মতো যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা এ ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটতেই থাকবে। এর আগে উচিত, অভিভাবকদের প্রশ্নপত্র কেনার মতো জঘন্য মানসিকতা থেকে বের হওয়া। অপরাধী শুধু নিতিশ-আনিসরা না, তাঁরাও। দুই তরফা অপরাধকে দুই দিক থেকেই উপড়ে ফেলতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে লতিফ সিদ্দিকী অবরুদ্ধ, নেওয়া হলো পুলিশি হেফাজতে

রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র পরিদর্শনের পর যা জানাল আইএইএর বিশেষজ্ঞ দল

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবি শিক্ষক কার্জনসহ ১১ জন ডিবি হেফাজতে

বড় ভাইসহ ডিবি হেফাজতে থাকা সবার সসম্মানে মুক্তি চাই: কাদের সিদ্দিকী

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত