Ajker Patrika

এবার অস্থির যন্ত্রাংশের বাজার

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, মধুপুর
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২২, ১২: ৫৮
এবার অস্থির যন্ত্রাংশের বাজার

মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় মধুপুরে তথ্যপ্রযুক্তির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। মুনাফালোভীদের গড়ে তোলা চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে লুটে নিচ্ছেন অধিক মুনাফা। এতে হোঁচট খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের।

তাঁরা জানান, লকডাউনের সময়েও এসব যন্ত্রাংশের সংকট ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করেই এমন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এমন অবস্থা তৈরি করে মুনাফা লুটছেন।

জানা গেছে, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম এখন অনলাইন। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছেন মেধাবী তরুণেরা। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ঝোঁক এখন আইটি জগতে। কেউ আউটসোর্সিং নিয়ে ব্যস্ত, আবার কেউ কম্পিউটার, প্রিন্টার, লেমিনেটিং মেশিন ও ফটোকপির মেশিনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন। এসব কাজের জন্য অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতির মধ্যে অন্যতম হলো কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মডেম, প্রিন্টারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।

আরও জানা গেছে, একটি ব্র্যান্ড নিউ কম্পিউটারের দাম অনেক বেশি হওয়ায় খুচরা যন্ত্রাংশ কিনে অ্যাসেম্বলি করে বিকল্প পদ্ধতিতে সাশ্রয়ী মূল্যে বানিয়ে নেওয়া যায়। সাধারণত মধ্যম ও নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্যরা এভাবেই কম্পিউটার তৈরি করে থাকেন, কিন্তু সেই যন্ত্রাংশের বাজারে চলছে নৈরাজ্য। প্রায় প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে যন্ত্রাংশের দাম। বিভিন্ন মডেলের প্রিন্টার ও ফটোকপির মূল্য দ্বিগুণে পরিণত হয়েছে।

মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা এবং ঢাকা ও ময়মনসিংহের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ হাজার টাকা দামের মাদার বোর্ড বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকায়। একটি প্রসেসর ১৪ হাজার ৫০০ টাকার জায়গায় বিক্রি হচ্ছে ১৮ হাজার ৫০০ টাকায়। ৬ হাজার টাকার মনিটর এখন ১০ হাজার ২০০ টাকা। গ্রাফিকস কার্ড দ্বিগুণের বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ৩ হাজার ৫০০ টাকার স্থলে বর্তমান বাজারদর ৭ হাজার ৫০০ টাকা। স্ক্যানারের দাম তিন গুণ বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার টাকায়। প্রিন্টারের দাম বেড়েছে গগনচুম্বী। সাড়ে ৯ হাজার টাকার প্রিন্টার এখন ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১১ হাজার ৫০০ টাকা দামের প্রিন্টার এখন ৩০ হাজার ছুঁই ছুঁই।

এ ছাড়া মাউস, কি-বোর্ড, র‌্যাম, হার্ডডিস্ক, রুলিং ফ্যান, ডিভিডি রাইটার, স্ক্যানার, ইউপিএস, রাউটারসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে।

কম্পিউটার যন্ত্রাংশের ব্যবসায়ী স্বপন মিয়া জানান, কম্পিউটার যন্ত্রাংশের বাজারে হাহাকার চলছে। কোনো পণ্যের চাহিদা ১০টি থাকলে ২ থেকে ৩টি পাওয়ায় যায়। তারপরেও সিরিয়াল দিয়ে আনতে হয়। আমদানি কম থাকার কথা বলে আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন কোম্পানির মালিক বা ডিলাররা।

ইপসন ঢাকা অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রাংশের বাজার অনেকটা পুঁজিপতিদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ডিলাররা ধাপে ধাপে দাম বাড়িয়ে অধিক মুনাফা লুটে নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের সহকারী প্রোগ্রামার শেখ আবরারুল হক শিমুল জানান, মধুপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল ঘুরে তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশের উচ্চমূল্য লক্ষ করা গেছে। আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে মুনাফালোভীরা অর্থ লুটে নিচ্ছেন।

মধুপুর কম্পিউটার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘কম্পিউটার যন্ত্রাংশের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমদানিনির্ভর এই পণ্যগুলো মুনাফালোভীরা মজুত করে তাঁদের ইচ্ছেমতো বিক্রি করছেন। আমরা পুরোপুরি অসহায়।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। তবে যদি কোনো ক্রেতা অভিযোগ করেন, তাহলে ভোক্তা অধিকার আইনে খতিয়ে দেখা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত