Ajker Patrika

বিরোধ কিংবা বিরোধ নয়

সম্পাদকীয়
বিরোধ কিংবা বিরোধ নয়

শঙ্খ ঘোষ আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে সরাসরি কোনো বিরোধ হওয়ার সুযোগ ছিল না। বয়সে কিছুটা বড় শঙ্খ ঘোষকে সুনীল সম্মান করতেন। দুজনের মধ্যে কাব্যাদর্শ নিয়ে কথা হয়েছে হাতে গোনা দুবার। একবার ১৯৬১-৬২ সালে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বাড়িতে। সে বাড়িতেই সুনীল কথা প্রসঙ্গে জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘মৃত্যু আর যৌনতা ছাড়া আর কিছুই ভাববার নেই কবিতায়।’

শঙ্খ ঘোষ উত্তরে বলেছিলেন, ‘তাই?’ ব্যস, এর পর আর কথা এগোয়নি।

এর কয়েক বছর পর ১৯৬৭ সালে কবিতার তাত্ত্বিক জায়গা নিয়ে সুনীল আরেকটি বোমা ফাটালেন, ‘এখনকার কবিতায় লিরিকটাকে একেবারে ছেড়ে দিতে হবে।’ তারপর শঙ্খ ঘোষের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, ‘এ কথাটা কি শক্তিকে একটু বুঝিয়ে বলতে পারেন?’

শঙ্খ ঘোষ শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে তা বুঝিয়ে বলতে যাননি।

তবে সুনীলের লেখালেখি নিয়ে নিজের লেখাতেই একটা তর্ক তুলেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। সুনীল তখন ‘রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ সংকলনটি বের করেছেন। সেটি নিয়ে শঙ্খ ঘোষ লিখলেন, ‘ব্যক্তিগত কুঠার’ নামে দীর্ঘ আলোচনা। তাতে কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন শঙ্খ ঘোষ।

সুনীল কিন্তু সে প্রশ্নের ধারেকাছে গেলেন না। বললেন, ‘লেখাটা পড়ে আমি মুগ্ধ।’

 ‘কিন্তু আমি যে কিছু প্রশ্ন তুলেছিলাম?’ বললেন শঙ্খ ঘোষ।

‘হ্যাঁ, সেটা নিয়ে ভাবব। কিন্তু লেখাটা বড় ভালো লাগল।’

নন্দীগ্রাম নিয়ে অবশ্য দুই মেরুতে ছিলেন দুজন। কিন্তু যখন আড্ডা দুজনের, তখন শঙ্খ ঘোষ বলছেন, ‘কিন্তু শিল্পটারও তো দরকার।’

 ‘কিন্তু পদ্ধতিটা?’ প্রশ্ন শঙ্খ ঘোষের।

 ‘হ্যাঁ, পদ্ধতিটা ঠিক হয়নি।’

শঙ্খ ঘোষ বললেন, ‘রাজ্যের মঙ্গলের জন্য এ-সরকারের অন্তত পাঁচ বছরের জন্য সরে যাওয়া উচিত।’

সুনীল একমত হয়ে বিমর্ষ মুখে বললেন, ‘সেটা খুবই ঠিক। একটানা ক্ষমতায় এভাবে থাকা ঠিক নয়। তবে মুশকিল হলো, বদল হলে যিনি আসবেন, সেটা ভাবতেই অস্বস্তি হয়।

সূত্র: শঙ্খ ঘোষ, অল্পস্বল্প কথা, পৃষ্ঠা ১৪৫-১৪৭ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত