Ajker Patrika

কামিনী মহন্তের কষ্টের দিন

তারাগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২১, ২২: ২২
কামিনী মহন্তের কষ্টের দিন

অভাবের কারণে অনেক বছর আগে সন্তানদের নিয়ে সংসার ছেড়ে চলে গেছেন স্ত্রী। এখন বয়সের ভারে নিজের শরীরে বল না থাকায় হাঁটতে হয় লাঠিতে ভর দিয়ে, চোখে দেখেন ঝাপসা। জীবন চলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করে।

এভাবেই কষ্টে দিন কাটছে তারাগঞ্জের ইকরচালী ইউনিয়নের শাহপাড়া গ্রামের কামিনী মহন্তের। সরকারি হিসেবে তারাগঞ্জ শতভাগ বয়স্ক ভাতার আওতায় আসলেও জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় এই বৃদ্ধের ভাগ্যে তা জোটেনি। যদিও তাঁর ছোট ভাই এই সুবিধা পাচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কামিনীর সহায় সম্বল কিছু নেই। শাহপাড়া গ্রামের পাশে যমুনেশ্বরী নদীর ধারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্যানেলে পলিথিনের খুপরিতে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। কামিনীর ছোট ভাই গণেশ মহন্তের বয়স জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ৬৬ বছরের বেশি। তিনি বয়স্কভাতা পেলেও বড় ভাই কামিনী এখনো তা পাচ্ছেন না। কামিনীর দুই ভাই থাকলেও তাঁদের নিজেদের সংসারই ঠিকমতো চলে না।

গতকাল শাহপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেচ প্রকল্পের পরিত্যক্ত ক্যানেলের ধারে খুপরিতে বসে আছেন কামিনী। বয়স আর রোগে শরীর দুর্বল হয়ে গেছে। পরনে পুরোনো ময়লা একটি পাঞ্জাবি।

কামিনী ভারাক্রান্ত গলায় বলেন, ‘মোক দেইখার কাও না। অ্যালা শরীর কুলায় না, হাঁটিরও পাও না। মোর ছোটগুলা সরকারি ভাতা পায়, মুই পাও না। মেম্বার-চেয়ারম্যান কয় মোর ভোটের কার্ড নাই। মোর অনুরোধ, মোক ভাতা করি দেও। মুই খায়াপরি বাঁচির চাও।’

কথা হয় কামিনীর ছোট ভাই গণেশের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স্ক ভাতা হয়েছে। কিন্তু বড় ভাই কামিনী মহন্তের ভোটার কার্ড না থাকায় কার্ড হয় নাই। ভাইয়ের খুব কষ্টে দিন কাটছে। সরকারের কাছে অনুরোধ ভাইয়ের জন্য একটা ভাতা করি দেওয়ার জন্য।’

কামিনীর অবস্থাকে খুবই করুণ হিসেবে বর্ণনা করেন ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য রবিউল ইসলাম। তিনি জানান, গ্রামবাসীর দানে কামিনীর জীবন টিকে আছে। বিভিন্ন উৎসবে সরকার হতদরিদ্রদের জন্য ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দিলে তা তাঁকে দেওয়া হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তাঁর নাম বয়স্ক ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহামুদুল হক বলেন, ‘বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকা গ্রামীণ পর্যায় থেকে জনপ্রতিনিধিরাই করে থাকেন। কামিনী মহন্তের নাম জনপ্রতিনিধিরা না পাঠানোই বয়স্ক ভাতার তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।’

জাতীয় পরিচয়পত্র করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন জানান, নতুন ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম সব সময় চালু আছে। ওই ব্যক্তির বাবা, মা অথবা ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, জন্মসনদ, চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র ও নাগরিক সনদ নিয়ে নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করলে ভোটার তালিকায় তাঁর নাম হালনাগাদ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত