Ajker Patrika

আবারও সোলার ফেন্সিং প্রকল্প!

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২২, ১৫: ০৫
আবারও সোলার ফেন্সিং প্রকল্প!

ভারত সীমান্তঘেঁষা শেরপুরের তিন উপজেলা শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীর বিশাল এলাকাজুড়ে গারো পাহাড়। এই পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকালয়ে হাতির প্রবেশ রুখতে প্রায় পাঁচ বছর আগে ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীতে বন বিভাগের উদ্যোগে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সোলার ফেন্সিং।

কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রকল্পটি পুরোপুরি ভেস্তে গেছে। এটি হাতি তাড়ানোর কোনো কাজে আসেনি। এরই মধ্যে কোটি টাকা ব্যয়ে আবারও সোলার ফেন্সিং স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে বন বিভাগ। এতে আবারও সোলার ফেন্সিংয়ের নামে কোটি টাকা অপচয় হবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের বনাঞ্চলে আদিকাল থেকেই হাতির বিচরণ রয়েছে। বনের যেসব এলাকা দিয়ে হাতি চলাচল করত সেখানে এখন বাড়িঘর উঠেছে। হাতি তার পূর্ব চেনা রাস্তা দিয়ে বিচরণ করে এবং খাবার সন্ধানে প্রায়ই চলে আসছে এসব লোকালয়ে। আর এ কারণে এসব পাহাড়ি এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব। আর ক্ষতি করছে মানুষের ফসল, বাড়িঘর ও গাছপালা। জানমাল বাঁচাতে হাতি তাড়াতে গিয়ে প্রতিবছর হাতির আক্রমণে মারা পড়ছে মানুষ। অন্যদিকে নানাভাবে মারা পড়ছে হাতিও। গত চার মাসে মারা গেছে চারটি হাতি। আর ১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত হাতি-মানুষের দ্বন্দ্বে মানুষ মারা গেছে অন্তত ৯০ জন। একই সময়ে বন্য হাতি মারা গেছে প্রায় অর্ধশত। এতে হাতির সংখ্যাও দিনদিন কমছে।

হাতি-মানুষের এই দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে বন বিভাগ গারো পাহাড়ের শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী এলাকায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ সোলার ফেন্সিং লাইন নির্মাণ করে। উদ্দেশ্য ছিল সোলার ফেন্সিংয়ের তারে শক খেয়ে হাতি বনে চলে যাবে। এই শক খেয়ে হাতি মারা যাবে না। এতে মানুষ, ফসল, বাড়িঘর রক্ষার পাশাপাশি হাতিও রক্ষা পাবে। কিন্তু শুরু থেকেই এসব সোলার ফেন্সিং কেউ রক্ষণাবেক্ষণ না করায় অকেজো হয়ে পড়ে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সোলার ফেন্সিংয়ে নিম্নমানের কাজ করে বিল উঠিয়ে নিয়ে সটকে পড়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, সোলারের ব্যাটারি রাখার জন্য পাকা ঘরটিতে ব্যাটারিগুলোর একটিরও কোনো হদিস নেই। শুধুমাত্র রাস্তায় কিছু খুঁটি আর ছেঁড়া জিআই তার ছাড়া আর কিছু নেই। ফলে কোটি টাকা ব্যয়ে করা এই সোলার ফেন্সিং প্রকল্পটি ভেস্তে গেছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলার ছোট গজনী এলাকার মো. রমজান আলী বলেন, ‘ফেন্সিং আমাদের পাহাড়ি এলাকায় হাতি ফিরানোর জন্য করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কাজে লাগে নাই। কত টাহা আইছে আমরা তো আর জানি না। সব মাইরা খাইছে বন বিভাগের লোকেরা।

একই এলাকার ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘এই ফেন্সিং দেওয়ার পরও হাতি আসছে। ফসলের ক্ষতি করছে, মানুষ মারছে। এইটা দিয়া আমাদের লাভ কি?’ তাওয়াকুচা এলাকার ইকনাস সাংমা বলেন, ‘আমাদের পাহাড়িদের রক্ষা করার জন্য সোলার ফেন্সিং করেছিল। কিন্তু তা আমাদের কোনদিনও কাজে লাগে নাই।’

এ বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘হাতির আক্রমণ থেকে ফসল ও বাড়িঘর রক্ষায় আরও ১০ কিলোমিটার সোলার ফেন্সিং করার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। আমরা এর আগে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীতে ১১ কিলোমিটার সোলার ফেন্সিং করেছিলাম। সেটা পাইলট প্রকল্প ছিল। সেখানে যে যে সমস্যা ছিল, তা স্থানীয় বনবিভাগ চিহ্নিত করেছে। নতুন ১০ কিলোমিটারে আগের সমস্যাগুলো দূর করে নতুন করে কার্যকর সোলার ফেন্সিং লাইন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত