Ajker Patrika

প্রকৃতির শিকল

সম্পাদকীয়
প্রকৃতির শিকল

কেমন লাগবে যখন আপনাকে চিড়িয়াখানায় কিংবা বনে যেতে হবে না; বরং চিড়িয়ারা আপনার ঘরের চালায় লাফাবে, বাগানের গাছের ডালে ঝুলবে, হেঁশেলে ঢুকে হাঁড়ি ওলটাবে? ভাবতে পারেন, টিকিট কাটার ঝক্কি শেষ; বাসে চড়ে বনে যেতে হবে না, যেতে হবে না কোনো চিড়িয়াঘর বা সাফারি পার্কে। আবার এটাও ভাবতে পারেন, গৃহবন্দী আপনাদের চিড়িয়ারা দেখতে আসবে বাড়িতে! ব্যাপারটা হবে অনেকটা যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘মজার দেশ’ ছড়ার মতো—‘মুখে লাগাম দিয়ে ঘোড়া/ লোকের পিঠে চড়ে!’

আবার কেউ কেউ এ কথাও মনে করতে পারেন, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’। কিন্তু কেউ কি এ কথা ভাবতে পারেন যে কেন চিড়িয়ারা বন ছেড়ে লোকালয়ে তথা আমাদের ঘরবাড়িতে হামলে পড়বে? নিশ্চয়ই এ ধরনের খবর আপনাদের চোখ এড়িয়ে যায়নি—বাঘ, বনবিড়াল বা বানরের মতো বন্য প্রাণীরা ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। হয়তো দেখে থাকবেন আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরটিও; যেখানে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, খাবারের খোঁজে বানরের দল লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে।

বানর জাতিকে আমরা একটু বেশি দুষ্ট বলেই জানি। তাই তাদের দুষ্টামিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার পাঞ্জারামপাড়া ও পান্নাবিল এলাকার লোকজন। তাদের চাষবাস করা শিম, লাউ, পেঁপে এবং অন্যান্য সবজি ও ফল ছিঁড়ে খায় বানরেরা।

আরও খায় ধান, ধানের চারা, বাঁশকোঁড়ল, রান্না করা ভাত-তরকারি। সূর্য ওঠার আগেই অনেকের ঘরের চালে বসে পেয়ারা, কাঁঠাল, লিচু, আম, জামের মতো মৌসুমি ফল নিজেদের পেটে ঢুকিয়ে ফেলে। চালায় বসে তাদের ভোজনের সময়টায় হয় মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত।
প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবনযাপন করা এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হলেও বানরগুলোর ক্ষতি না করে তাদের বনে দিয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। বানরেরা ফিরে আসে বারবার। কারণ বনে তাদের খাবার নেই। মানুষের ঘরে তারা খাবার খুঁজে পায়।

বনে কেন খাবার নেই—এর উত্তরও ছাপা খবরটি থেকে পাওয়া যায়। আগে জঙ্গলে চাঁপালিশ, ডেউয়াসহ নানা প্রজাতির গাছের ফল খেয়ে ওরা বেঁচে থাকত। সেই গাছগুলো এখন আর বন-জঙ্গলে নেই। আর মানুষজন এখন এসব গাছ লাগায় না, লাগায় নিজেদের প্রয়োজনীয় ফল-ফলাদির গাছ। ফলে প্রাণীদের খাদ্যসংকট তো হবেই। তাই তারা মানুষের খাবারে ভাগ বসাচ্ছে।

আবার মানিকছড়ি উপজেলায় রিজার্ভ বনও নেই। আমরা মানুষেরা নিজেদের প্রয়োজনে যখন বন উজাড় করে ফেলি, তখন ভাবি না এই বনের প্রাণীরা কোথায় যাবে, কী খাবে। আমরা ভুলে যাই মানুষেরাও জীববৈচিত্র্যের অংশ। বাস্তুসংস্থানের শিকলে মরচে ধরলে শুধু বন্য প্রাণী নয়, ক্ষতি মানুষেরও হবে। অথচ আমরা শিকল ভাঙতে থাকি বারবার! আমরা সব ধরনের শিকল ভাঙতে ভাঙতে ভুলেই গিয়েছি যে প্রকৃতির শিকল কখনো ভাঙতে হয় না। প্রকৃতির শিকল ভাঙা মানে আত্মহননের পথে হাঁটা।

প্রকৃতিকে বাঁচানোর সিদ্ধান্ত ও দায়িত্ব সব মানুষের এবং আমরা সবাই জানি সেটা কীভাবে সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত