Ajker Patrika

যুবলীগ নেতা কে টাকা দিয়ে জমি-বাড়ির মাটি রক্ষা!

মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ৫৭
যুবলীগ নেতা কে টাকা দিয়ে জমি-বাড়ির মাটি রক্ষা!

কুমিল্লার মুরাদনগরে একটি রাস্তা এক ফুট উঁচু করে পাকা করা হবে। এ জন্য ঠিকাদারের পক্ষে রাস্তার পাশের বাসিন্দাদের জমি ও বাড়ি থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটতে যান শ্রীকাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি শাহজালাল। ২০টি পরিবার জমি ও বাড়ির মাটি রক্ষায় তাঁকে ১১ লাখ টাকা দেন। আর যাঁরা টাকা দিতে পারেননি, তাঁদের মাটি কেটে নেন তিনি।

যুবলীগ নেতা শাহজালাল বলেন, রাস্তার পাশের অধিকাংশ বাড়ি সরকারি খাস জমিতে রয়েছে। আর ওই টাকা নিয়েছেন ঠিকাদারের পরামর্শে।

জানা গেছে, উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন বলিঘর-সাহেদাগোপ রাস্তার ১ হাজার ৫০০ মিটার উঁচু ও পাকা করা হবে। এ জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কামাল উদ্দিন নামের একজন ঠিকাদার কাজটি পেয়েছেন। রাস্তাটি উঁচু ও পাকাকরণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ঠিকাদার কামাল উদ্দিন রাস্তা ভরাটের জন্য মাটি সংগ্রহের দায়িত্ব দেন যুবলীগ নেতা শাহজালালকে। তিনি রাস্তার পাশের জমি ও বাড়ি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটতে যান। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দিলে, তাঁদের নানা ধরনের হুমকি-ধমকি ও হামলা-মামলার ভয় দেখান। পরে শাহজালাল ২০টি পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাঁদের জমি ও বাড়ির মাটি কাটা থেকে বিরত থাকেন।

সাহেদাগোপ গ্রামের আবুল কাশেম বলেন, ‘রাস্তার পাশে আমাদের একই পরিবারের শাহ আলম, কাজল ও নাজমার তিনটি বাড়ি রয়েছে। কিছুদিন আগে রাস্তার কাজ করার জন্য ভেকু দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে মাটি কাটতে আসেন শাহ জালাল। পরে আমরা কাকুতি-মিনতি করে বলার পর তিনি বাড়ি প্রতি ৫৫ হাজার টাকা দিলে অন্য জায়গা থেকে মাটি আনবেন বলে আমাদের প্রস্তাব দেন। পরে ঘরবাড়ি বাঁচাতে কেউ স্বর্ণের অলংকার বিক্রি করে, আবার কেউ ফসলি জমি বন্ধক দিয়ে টাকা সংগ্রহ করে শাহজালালকে দিই।’

শুধু তাঁরাই নন, এই রাস্তার পাশে যত বাড়ি আছে, তার মধ্যে যাঁরা টাকা দিতে পারেননি, তাঁদের বাড়ি থেকে মাটি নেওয়া হয়েছে। আর যাঁরা টাকা দিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি থেকে মাটি নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

একই গ্রামের রমজান ও মতিন বলেন, ‘আমরা নিরীহ মানুষ। টাকা না দিলে ভেকু দিয়ে বাড়ি থেকে মাটি কাইট্টা লইয়া যাইত। কী করমু বাধ্য হইয়া টাকা দিয়া দিছি।’

জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা শাহজালাল বলেন, ‘আমি ঠিকাদার কামাল উদ্দিনের কাছ থেকে মাটি ভরাটের কাজ পেয়েছি। রাস্তার পাশের অধিকাংশ বাড়ি সরকারি খাস জমিতে রয়েছে। সেখান থেকে মাটি কাটতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা আমাকে বাধা দেন। পরে আমি ঠিকাদারকে জানালে তিনি বাড়ির মালিকদের সঙ্গে রফাদফা করে আমাকে বলেন, তাঁদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অন্য জায়গা থেকে মাটি এনে রাস্তার কাজ করার জন্য। ঠিকাদারের কথায় আমি টাকা নিয়েছি।’

তবে ঠিকাদার কামাল উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তায় বালু-মাটি ফেলে এক ফুট উঁচু করার জন্য আমি শাহজালালের সঙ্গে চুক্তি করেছি। আমার কাজ টাকা দেওয়া। শাহজালাল কোথায় থেকে মাটি দেবে, সেটি তাঁর ব্যাপার। বাড়ি থেকে মাটি কাটা কিংবা মাটি না পেলে টাকা আদায় করার বিষয়টি আমার জানা নাই।’

উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে যদি মাটি সংগ্রহ করতে অসুবিধা হয়, তাহলে আমার অফিস ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্যদের মাধ্যমে সেটি সুরাহা করা হয়। যদি কেউ টাকার বিনিময়ে কোনো কিছুর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে সেটি অন্যায় করেছেন। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

‘তুমি ঘুমাও কীভাবে’, সৌদি যুবরাজকে নিয়ে ট্রাম্পের বিস্ময়

বিদায় বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত