রিচার্ড সিলভারস্টেইন
গত ৭ অক্টোবর, হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে একটি সাহসী এবং মরিয়া অভিযান চালিয়ে সেখানকার বেশ কয়েকটি শহর দখল করে। হত্যা করে ১ হাজার ১৪০ জনকে। বিমান, স্থল ও সমুদ্রপথে হামাসের এই সমন্বিত হামলা ছিল একেবারে অপ্রতিরোধ্য। এই ঘটনার কারণে যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে হামাসকে নিষিদ্ধ করেছে। আর এটি ইসরায়েল ও গোটা বিশ্বকে হতবাক করেছে।
এক বছরের বেশি সময় ধরে পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণের পর এক হাজার যোদ্ধা বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা ঢালটি ভেঙে ফেলে ইসরায়েলে ঢুকে পড়ে। এক দশক বা এরও বেশি সময় ধরে গাজার চারপাশে এই ঢাল তৈরি করেছে ইসরায়েল। এই হামলা সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে বিশ্বের সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই ব্যবস্থাকে ছোট একটা গেরিলা বাহিনী নজরদারি, পরিকল্পনা ও রণকৌশল ব্যবহার করে উড়িয়ে দিতে পারে।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা ও সেনাবাহিনী একপ্রকার বিশ্বাস করে ফেলেছিল যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বড় অভিযান চালাতে গেলে হামাসকে অনেক কিছু হারাতে হবে।
তার চেয়ে বরং গাজার শাসন টিকিয়ে রাখতেই বেশি আগ্রহী তারা। ইসরায়েলিদের এই ধারণা ছিল সম্পূর্ণ ভুল।
ভাগ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
ইসরায়েল ও গাজায় তাদের ১৭ বছরের অবরোধ নাগরিকদের হতাশা কিছুটা হলেও কমিয়েছিল। তাদের বেশির ভাগই কোনো উন্নত জীবনের, কোনো উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো দেখতে পায় না। তারা বেঁচে থাকে অন্যকে কষ্ট দিয়ে। আর এই হামলা ছিল ভাগ্যের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ, একটি ঘোষণা যে ফিলিস্তিনি জনগণ চরমতম মূল্য দিয়ে হলেও অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।
বিশ্বও আপাতদৃষ্টিতে ফিলিস্তিনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র চারটি আরব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যবস্থা করে। এই চারটি রাষ্ট্র আগে কিন্তু ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছে। ৭ অক্টোবরের হামলার আগ পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসন সৌদি আরবকে এই ব্যবস্থায় যোগদানের জন্য অনুরোধ করছিল। এটা সম্ভবত হয়েও যেত। কিন্তু হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এ চেষ্টাকে নস্যাৎ করে দিল।
ফিলিস্তিনিরা আবারও আলোচনার কেন্দ্রে ফিরে এসেছে। তারা বিশ্বকে তাদের দুর্দশার কথা শুনতে বাধ্য করেছে। তারা তাদের অধিকার দাবি করেছে। ৭ অক্টোবরের হামলা সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে ফিলিস্তিনিরা অবিচল এবং তারা চুপ হবে না কখনো। আর এটা উপেক্ষা করলে চরম মূল্য দিতে হবে।
ইসরায়েলের রক্তাক্ত আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ২২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। আর এতে ইসরায়েল সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী ধারণা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলকে একটি গণতান্ত্রিক ও নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবক দেশ হিসেবে না দেখে বিশ্ব এখন একে রক্তপিপাসু, গণহত্যাকারী শাসন হিসেবে দেখছে।
আর হামাস আবারও ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদের আদর্শের প্রধান ধারক হয়ে উঠেছে এবং ফাতাহ এখন শত্রু ইসরায়েলের দুর্নীতিগ্রস্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। হামাস একটি আঘাত করেছে। ফিলিস্তিনিদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে সশস্ত্র প্রতিরোধ, তার মূল্য যা-ই হোক না কেন, বিশ্ব তা বুঝেছে।
দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ
ইরাক থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত মার্কিন ও ইসরায়েলি সামরিক এবং বাণিজ্যিক স্বার্থের বিরুদ্ধে হামলা চালানো ইরান ও তার প্রতিরোধী শক্তির হাতকে হামাস শক্তিশালী করেছে। ইসরায়েল এখন দুটি ফ্রন্টে যুদ্ধের মুখোমুখি। গাজায় এবং উত্তরে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে। হামাসের চেয়েও কিন্তু হিজবুল্লাহ আরও শক্তিশালী শত্রু। শুধু হিজবুল্লাহ নয়, লেবাননের সেনাবাহিনীর অবস্থানেও ইসরায়েল হামলা করেছে, যা পরে মার্কিন সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের আক্রমণ করেছে, যাঁরা সংঘাতের বিষয়ে রিপোর্ট করছিলেন। এক শ জনের
বেশি সাংবাদিককে হত্যা করেছে। এটা ইসরায়েলের নিজস্ব বিচারে অপরাধী হিসেবে নথিভুক্ত সাংবাদিকদের নির্মূল করার একটি পদ্ধতিগত চেষ্টার অংশ।
ইয়েমেনে ইরানের মিত্র হুতিরা লোহিত সাগরের ইসরায়েলগামী জাহাজের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। মার্কিন যুদ্ধজাহাজ হুতিদের নৌযানে হামলা করেছে। তারা হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে নামিয়েছে। সিরিয়া ও ইরাকে হামলার সম্মুখীন হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র একটি দীর্ঘায়িত আঞ্চলিক সংঘাতে জড়াতে চায় না। তবে ইসরায়েলের প্রতি তার সমর্থন অনিবার্য, যদিও তারা এটি এড়াতে চাইছে।
ইসরায়েলি গণহত্যাকে সমর্থন করা বাইডেনের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে তিনি হয়তো ২০২৪ সালে আর হোয়াইট হাউসে ফিরতে পারবেন না; বরং তাঁর জায়গায় একজন স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি কেবল ইসরায়েলকে রক্ষা করবেন না, তার সবচেয়ে বিপজ্জনক সামরিক দুঃসাহস দেখাতে উৎসাহিত করবেন।
হামাস এমন একটা নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেঙেছে, যেটাকে ইসরায়েলিরা দুর্ভেদ্য বলে মনে করেছিল। এটি হামাস সম্পর্কে ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দাদের সব অনুমান ভেঙে দিয়েছে।
চড়া মূল্য
ইসরায়েলের ওপর হামলা আরও একটি বিষয় সামনে এনেছে, হামাস বা ফিলিস্তিনিরা সাধারণভাবে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টিতে বিশ্বাস করে না। যতক্ষণ না বিশ্ব এই মৃত আশ্বাসটিকে কোনো জাদুকরী মন্ত্র দিয়ে জীবিত করবে, তত দিন হামাস এর মিথ্যা দিকটি তুলে ধরতেই থাকবে।
প্রত্যেক ফিলিস্তিনি জানে তাদের নিজস্ব কোনো রাষ্ট্র পাওয়ার আশা নেই। কারণ ইসরায়েল এর তীব্র বিরোধিতা করে। তথাকথিত মধ্যপন্থী ইসরায়েলি দলগুলোও এটিকে সমর্থন করতে অস্বীকার করে। এমনকি ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে সামান্য সম্মানজনকভাবে কথা বললে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে উপহাসের শিকার হতে হয় এবং রাজনীতিতে তিনি অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়েন। ফিলিস্তিনিরা মার্কিন বা ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছ থেকে তেমন কিছু আশা করে না। তারা জানে যে ইসরায়েলি প্রতিরোধকে পরাস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে কেউই ইচ্ছুক নয়।
সশস্ত্র সংঘাতের সব পরিমাপক দ্বারা বলা যায়, ইসরায়েল গাজার যুদ্ধে জিতেছে। আনুমানিক আট হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে (যদিও মোট সংখ্যা ৩০ হাজারের মধ্যে)। তবে প্রায় তিন মাস হয়ে গেল তারা হামাসের সামরিক বাহিনীকে ২৫ শতাংশের কম নির্মূল করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামাসের মাইল মাইল টানেল ধ্বংস করেছে। কিন্তু এটি তিন শ মাইল লম্বা ভূগর্ভস্থ টানেলটির ধারেকাছে আসেনি। কারণ এটা ধ্বংস করতে হলে আরও বেশি ইসরায়েলি সেনার মৃত্যুর ঝুঁকি থাকবে। তাই ইসরায়েলিরা অবরোধ করেছে। আর এটা করেছে এ কারণে যে গাজায় ফিলিস্তিনিদের শাস্তি দিতে এবং হামাসকে এমন চাপ দিতে, যাতে তাদের জীবনকে অসম্ভব না হলেও কঠিন করে তোলা। এই অবরোধ তুলনামূলকভাবে অবাধে সর্বত্র কাজ করে। এই সবকিছুর মূল্য হিসাবে পাঁচ শ ইসরায়েলি সৈন্য নিহত এবং পাঁচ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। অনেকের অঙ্গহানি এবং অন্যান্য গুরুতর শারীরিক অক্ষমতা তৈরি হয়েছে।
যুদ্ধে হেরেছে ইসরায়েল
এটা বলাটা খুব একটা অন্যায্য হবে না যে ইসরায়েল যে যুদ্ধ শুরু করেছিল, তাতে জয়ী হওয়ার কোনো উপায় নেই। আর হামাস যেটা করছে তার সবটাই জেতার জন্য। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, তাঁর দেশের লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা। বাইডেনও এই লক্ষ্য অর্জনে সমর্থন দিয়েছেন। ইসরায়েলি নেতারা বোঝেন যে এটি করার একমাত্র উপায়: গাজার সব বাসিন্দাকে নির্মূল অথবা বহিষ্কার করা। ফিলিস্তিনিদের সিনাই মরুভূমিতে বিতাড়িত করার জন্য গোয়েন্দা বিভাগ শুধু একটি পরিকল্পনাই প্রকাশ করেনি, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও মিসর ও জর্ডানে ইসরায়েলের তৈরি এই পরিকল্পনা তুলে ধরতে মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন। তবে তাঁরা ঘুরেফিরে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে দুটি লেখায় গাজার সব ফিলিস্তিনিকে এই অঞ্চলের আরব ও মুসলিম দেশগুলোতে বিতাড়িত করার ইসরায়েলি পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে। এটা কেউই ভালোভাবে নেয়নি।
ইসরায়েল গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের আর নির্মূল করবে না যতটা না হামাসকে নির্মূল করবে। নেতানিয়াহু ও বাইডেন অনেক বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাবেন, তবে তা রাখা যায় না। এটি এই সংঘর্ষের ট্র্যাজেডির অংশ। কেউ স্পষ্ট ও সত্য কথা বলেন না। প্রত্যেকেরই এই বিভ্রান্তি রয়েছে, কোনো না কোনোভাবে হামাস রাজি হবে, অবশ্যই হতে হবে।
কিন্তু হামাস কখনোই সহযোগিতা করে না। তারা প্রতিহত করে থাকে। যতই মিথ্যা বলা হোক না কেন, এটা থামাতে পারবে না। যত বেশি মিথ্যা বাইডেন প্রশাসন বা ইসরায়েলিরা বলবে, বিশ্ব তত কম বিশ্বাস করবে তাদের। এমনকি ইসরায়েল গাজাকে জাতিগতভাবে নির্মূল করতে সফল হলেও, এটি সংঘাতের অবসান ঘটাবে না। হামাস শুধু একটি রাজনৈতিক বা সামরিক সত্তা নয়। এটি একটি আন্দোলন, যা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আপনি এমন আন্দোলনকে বিনাশ করতে পারবেন না। আপনি এ নিয়ে যুদ্ধ করতে পারেন। আপনি এর যোদ্ধাদের হত্যা করতে পারেন। আপনি দখল করতে পারেন। এমনকি এর সব সমর্থককে জাতিগতভাবে নির্মূল করার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু আন্দোলন টিকে থাকবে। তার মানেই হলো, ইসরায়েলের ব্যর্থতা এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলায় তার সামরিক প্রতিরোধের ক্ষয়।
রিচার্ড সিলভারস্টেইন, প্রগতিশীল ইসরায়েলি লেখক
(মিডল ইস্ট আই-এ প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)
গত ৭ অক্টোবর, হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে একটি সাহসী এবং মরিয়া অভিযান চালিয়ে সেখানকার বেশ কয়েকটি শহর দখল করে। হত্যা করে ১ হাজার ১৪০ জনকে। বিমান, স্থল ও সমুদ্রপথে হামাসের এই সমন্বিত হামলা ছিল একেবারে অপ্রতিরোধ্য। এই ঘটনার কারণে যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে হামাসকে নিষিদ্ধ করেছে। আর এটি ইসরায়েল ও গোটা বিশ্বকে হতবাক করেছে।
এক বছরের বেশি সময় ধরে পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণের পর এক হাজার যোদ্ধা বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা ঢালটি ভেঙে ফেলে ইসরায়েলে ঢুকে পড়ে। এক দশক বা এরও বেশি সময় ধরে গাজার চারপাশে এই ঢাল তৈরি করেছে ইসরায়েল। এই হামলা সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে বিশ্বের সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই ব্যবস্থাকে ছোট একটা গেরিলা বাহিনী নজরদারি, পরিকল্পনা ও রণকৌশল ব্যবহার করে উড়িয়ে দিতে পারে।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা ও সেনাবাহিনী একপ্রকার বিশ্বাস করে ফেলেছিল যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বড় অভিযান চালাতে গেলে হামাসকে অনেক কিছু হারাতে হবে।
তার চেয়ে বরং গাজার শাসন টিকিয়ে রাখতেই বেশি আগ্রহী তারা। ইসরায়েলিদের এই ধারণা ছিল সম্পূর্ণ ভুল।
ভাগ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
ইসরায়েল ও গাজায় তাদের ১৭ বছরের অবরোধ নাগরিকদের হতাশা কিছুটা হলেও কমিয়েছিল। তাদের বেশির ভাগই কোনো উন্নত জীবনের, কোনো উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো দেখতে পায় না। তারা বেঁচে থাকে অন্যকে কষ্ট দিয়ে। আর এই হামলা ছিল ভাগ্যের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ, একটি ঘোষণা যে ফিলিস্তিনি জনগণ চরমতম মূল্য দিয়ে হলেও অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।
বিশ্বও আপাতদৃষ্টিতে ফিলিস্তিনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র চারটি আরব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যবস্থা করে। এই চারটি রাষ্ট্র আগে কিন্তু ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছে। ৭ অক্টোবরের হামলার আগ পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসন সৌদি আরবকে এই ব্যবস্থায় যোগদানের জন্য অনুরোধ করছিল। এটা সম্ভবত হয়েও যেত। কিন্তু হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এ চেষ্টাকে নস্যাৎ করে দিল।
ফিলিস্তিনিরা আবারও আলোচনার কেন্দ্রে ফিরে এসেছে। তারা বিশ্বকে তাদের দুর্দশার কথা শুনতে বাধ্য করেছে। তারা তাদের অধিকার দাবি করেছে। ৭ অক্টোবরের হামলা সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে ফিলিস্তিনিরা অবিচল এবং তারা চুপ হবে না কখনো। আর এটা উপেক্ষা করলে চরম মূল্য দিতে হবে।
ইসরায়েলের রক্তাক্ত আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ২২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। আর এতে ইসরায়েল সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী ধারণা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলকে একটি গণতান্ত্রিক ও নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবক দেশ হিসেবে না দেখে বিশ্ব এখন একে রক্তপিপাসু, গণহত্যাকারী শাসন হিসেবে দেখছে।
আর হামাস আবারও ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদের আদর্শের প্রধান ধারক হয়ে উঠেছে এবং ফাতাহ এখন শত্রু ইসরায়েলের দুর্নীতিগ্রস্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। হামাস একটি আঘাত করেছে। ফিলিস্তিনিদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে সশস্ত্র প্রতিরোধ, তার মূল্য যা-ই হোক না কেন, বিশ্ব তা বুঝেছে।
দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ
ইরাক থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত মার্কিন ও ইসরায়েলি সামরিক এবং বাণিজ্যিক স্বার্থের বিরুদ্ধে হামলা চালানো ইরান ও তার প্রতিরোধী শক্তির হাতকে হামাস শক্তিশালী করেছে। ইসরায়েল এখন দুটি ফ্রন্টে যুদ্ধের মুখোমুখি। গাজায় এবং উত্তরে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে। হামাসের চেয়েও কিন্তু হিজবুল্লাহ আরও শক্তিশালী শত্রু। শুধু হিজবুল্লাহ নয়, লেবাননের সেনাবাহিনীর অবস্থানেও ইসরায়েল হামলা করেছে, যা পরে মার্কিন সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের আক্রমণ করেছে, যাঁরা সংঘাতের বিষয়ে রিপোর্ট করছিলেন। এক শ জনের
বেশি সাংবাদিককে হত্যা করেছে। এটা ইসরায়েলের নিজস্ব বিচারে অপরাধী হিসেবে নথিভুক্ত সাংবাদিকদের নির্মূল করার একটি পদ্ধতিগত চেষ্টার অংশ।
ইয়েমেনে ইরানের মিত্র হুতিরা লোহিত সাগরের ইসরায়েলগামী জাহাজের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। মার্কিন যুদ্ধজাহাজ হুতিদের নৌযানে হামলা করেছে। তারা হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে নামিয়েছে। সিরিয়া ও ইরাকে হামলার সম্মুখীন হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র একটি দীর্ঘায়িত আঞ্চলিক সংঘাতে জড়াতে চায় না। তবে ইসরায়েলের প্রতি তার সমর্থন অনিবার্য, যদিও তারা এটি এড়াতে চাইছে।
ইসরায়েলি গণহত্যাকে সমর্থন করা বাইডেনের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে তিনি হয়তো ২০২৪ সালে আর হোয়াইট হাউসে ফিরতে পারবেন না; বরং তাঁর জায়গায় একজন স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি কেবল ইসরায়েলকে রক্ষা করবেন না, তার সবচেয়ে বিপজ্জনক সামরিক দুঃসাহস দেখাতে উৎসাহিত করবেন।
হামাস এমন একটা নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেঙেছে, যেটাকে ইসরায়েলিরা দুর্ভেদ্য বলে মনে করেছিল। এটি হামাস সম্পর্কে ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দাদের সব অনুমান ভেঙে দিয়েছে।
চড়া মূল্য
ইসরায়েলের ওপর হামলা আরও একটি বিষয় সামনে এনেছে, হামাস বা ফিলিস্তিনিরা সাধারণভাবে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টিতে বিশ্বাস করে না। যতক্ষণ না বিশ্ব এই মৃত আশ্বাসটিকে কোনো জাদুকরী মন্ত্র দিয়ে জীবিত করবে, তত দিন হামাস এর মিথ্যা দিকটি তুলে ধরতেই থাকবে।
প্রত্যেক ফিলিস্তিনি জানে তাদের নিজস্ব কোনো রাষ্ট্র পাওয়ার আশা নেই। কারণ ইসরায়েল এর তীব্র বিরোধিতা করে। তথাকথিত মধ্যপন্থী ইসরায়েলি দলগুলোও এটিকে সমর্থন করতে অস্বীকার করে। এমনকি ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে সামান্য সম্মানজনকভাবে কথা বললে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে উপহাসের শিকার হতে হয় এবং রাজনীতিতে তিনি অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়েন। ফিলিস্তিনিরা মার্কিন বা ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছ থেকে তেমন কিছু আশা করে না। তারা জানে যে ইসরায়েলি প্রতিরোধকে পরাস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে কেউই ইচ্ছুক নয়।
সশস্ত্র সংঘাতের সব পরিমাপক দ্বারা বলা যায়, ইসরায়েল গাজার যুদ্ধে জিতেছে। আনুমানিক আট হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে (যদিও মোট সংখ্যা ৩০ হাজারের মধ্যে)। তবে প্রায় তিন মাস হয়ে গেল তারা হামাসের সামরিক বাহিনীকে ২৫ শতাংশের কম নির্মূল করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামাসের মাইল মাইল টানেল ধ্বংস করেছে। কিন্তু এটি তিন শ মাইল লম্বা ভূগর্ভস্থ টানেলটির ধারেকাছে আসেনি। কারণ এটা ধ্বংস করতে হলে আরও বেশি ইসরায়েলি সেনার মৃত্যুর ঝুঁকি থাকবে। তাই ইসরায়েলিরা অবরোধ করেছে। আর এটা করেছে এ কারণে যে গাজায় ফিলিস্তিনিদের শাস্তি দিতে এবং হামাসকে এমন চাপ দিতে, যাতে তাদের জীবনকে অসম্ভব না হলেও কঠিন করে তোলা। এই অবরোধ তুলনামূলকভাবে অবাধে সর্বত্র কাজ করে। এই সবকিছুর মূল্য হিসাবে পাঁচ শ ইসরায়েলি সৈন্য নিহত এবং পাঁচ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। অনেকের অঙ্গহানি এবং অন্যান্য গুরুতর শারীরিক অক্ষমতা তৈরি হয়েছে।
যুদ্ধে হেরেছে ইসরায়েল
এটা বলাটা খুব একটা অন্যায্য হবে না যে ইসরায়েল যে যুদ্ধ শুরু করেছিল, তাতে জয়ী হওয়ার কোনো উপায় নেই। আর হামাস যেটা করছে তার সবটাই জেতার জন্য। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, তাঁর দেশের লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা। বাইডেনও এই লক্ষ্য অর্জনে সমর্থন দিয়েছেন। ইসরায়েলি নেতারা বোঝেন যে এটি করার একমাত্র উপায়: গাজার সব বাসিন্দাকে নির্মূল অথবা বহিষ্কার করা। ফিলিস্তিনিদের সিনাই মরুভূমিতে বিতাড়িত করার জন্য গোয়েন্দা বিভাগ শুধু একটি পরিকল্পনাই প্রকাশ করেনি, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও মিসর ও জর্ডানে ইসরায়েলের তৈরি এই পরিকল্পনা তুলে ধরতে মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন। তবে তাঁরা ঘুরেফিরে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে দুটি লেখায় গাজার সব ফিলিস্তিনিকে এই অঞ্চলের আরব ও মুসলিম দেশগুলোতে বিতাড়িত করার ইসরায়েলি পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে। এটা কেউই ভালোভাবে নেয়নি।
ইসরায়েল গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের আর নির্মূল করবে না যতটা না হামাসকে নির্মূল করবে। নেতানিয়াহু ও বাইডেন অনেক বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাবেন, তবে তা রাখা যায় না। এটি এই সংঘর্ষের ট্র্যাজেডির অংশ। কেউ স্পষ্ট ও সত্য কথা বলেন না। প্রত্যেকেরই এই বিভ্রান্তি রয়েছে, কোনো না কোনোভাবে হামাস রাজি হবে, অবশ্যই হতে হবে।
কিন্তু হামাস কখনোই সহযোগিতা করে না। তারা প্রতিহত করে থাকে। যতই মিথ্যা বলা হোক না কেন, এটা থামাতে পারবে না। যত বেশি মিথ্যা বাইডেন প্রশাসন বা ইসরায়েলিরা বলবে, বিশ্ব তত কম বিশ্বাস করবে তাদের। এমনকি ইসরায়েল গাজাকে জাতিগতভাবে নির্মূল করতে সফল হলেও, এটি সংঘাতের অবসান ঘটাবে না। হামাস শুধু একটি রাজনৈতিক বা সামরিক সত্তা নয়। এটি একটি আন্দোলন, যা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আপনি এমন আন্দোলনকে বিনাশ করতে পারবেন না। আপনি এ নিয়ে যুদ্ধ করতে পারেন। আপনি এর যোদ্ধাদের হত্যা করতে পারেন। আপনি দখল করতে পারেন। এমনকি এর সব সমর্থককে জাতিগতভাবে নির্মূল করার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু আন্দোলন টিকে থাকবে। তার মানেই হলো, ইসরায়েলের ব্যর্থতা এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলায় তার সামরিক প্রতিরোধের ক্ষয়।
রিচার্ড সিলভারস্টেইন, প্রগতিশীল ইসরায়েলি লেখক
(মিডল ইস্ট আই-এ প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৭ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৭ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৭ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫