Ajker Patrika

প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়

সম্পাদকীয়
প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া ডুবে আছে বন্যার পানির নিচে। ভয়াবহ এই বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে আছে মানুষের জীবন। বন্যার পানি যেসব এলাকায় ঘরের চালা ছুঁয়ে গেছে, সেখানে মানুষের বাস করাটা আরও দুঃসহ। এখন পর্যন্ত এই বন্যায় তিনজনের মৃত্যু যে কারও মনকে ব্যথাতুর করে। কিন্তু কেন এই বন্যা হলো আর কেনইবা তা এত ভয়াবহ হলো? বন্যাদুর্গত স্থানীয়রা কাউকে দুষছেন বলে জানা না গেলেও, কিছু কারণ দেখিয়ে দিচ্ছেন চোখে আঙুল দিয়ে। এরপর দায়ী ব্যক্তিরা কি আদৌ লজ্জা পাবেন বা নিজেদের ভুল শুধরাবেন? 

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও সদ্য নির্মিত রেললাইনে পানিনিষ্কাশনের জন্য নেই পর্যাপ্ত কালভার্ট। সাঙ্গু, টংকাবতী ও ডলু নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হয়, নদী দখলও করা হয় এবং নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। বন্যার পানি জমে থাকার জন্য এই কারণগুলো যথেষ্ট। অথচ অতিবৃষ্টিতে এর আগে পানি জমলেও এতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেনি বন্যা।

স্থানীয়রা বন্যার ভয়াবহতার সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণকে। রেলের এই ট্র্যাকের কারণে নতুন করে পানি জমছে বলে মনে করেন তাঁরা। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমামও তাঁদের সঙ্গে একমত। তাহলে কি এই রেললাইন নির্মাণের আগে যাচাই করে নেওয়া হয়নি? হয়েছে—এমনটা দাবি করছেন কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী। তিনি বলছেন, যথেষ্ট কালভার্টও নির্মিত হয়েছে এবং পানিনিষ্কাশনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তিনি দায়টা দিলেন দোহাজারী-কক্সবাজার মহাসড়কের। সেখানে কালভার্ট অপ্রতুল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

একে অপরকে এভাবে দোষারোপ করার সংস্কৃতি পুরোনো হয়ে যাচ্ছে। তার চেয়ে বরং কোনো কাজ, বিশেষ করে জনস্বার্থে উন্নয়নের কাজগুলো শুরু করার আগে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত। এ কথাও নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্টদের অজানা নয়। কিন্তু তাঁরা সঠিক পথে হাঁটবেন কবে? তাদের কি বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে ওই প্রবাদ—‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’?

আরেক দিকে প্রকৃতি ধ্বংস করছে কিছু অসাধু লোক। প্রায়ই খবরে প্রকাশিত হয়, ‘স্থানীয় প্রভাবশালীরা’ নদী থেকে বালু তুলে নেয় বা নদী দখল করে নেয়। নদী হারায় নাব্য। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অঞ্চলের বেলায়ও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। ‘স্থানীয় প্রভাবশালীরা’ এতই শক্তিশালী যে প্রশাসনও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না! অথচ প্রশাসনের হাত হওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে লম্বা। কথা ছিল, সেই হাতের ছায়ায় সাধারণ জনগণ নিরাপদ আশ্রয় পাবে, সুষ্ঠু বিচার পাবে। কিন্তু আদৌ তা হচ্ছে কি?

এদিকে যারা অন্যায়ভাবে নদী দখল করেই যাচ্ছে, তারা কি ভাবতে পারছে যে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছে নিজেরাই? নদী নাব্য হারালে বন্যা হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়। আর বন্যা এ রকম ভয়াবহ রূপ নিলে মানুষের বেঁচে থাকা যে কঠিন, সে কথা ভাবার কেউ নেই। এটাও কেউ মনে রাখে না—প্রকৃতিকে ধ্বংস করলে সে তার প্রতিশোধ নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত