Ajker Patrika

‘এই রোক্কে রোক্কে’

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ০৪
‘এই রোক্কে রোক্কে’

আশপাশের সবার মুখে স্পষ্ট উচ্চারণ শুনতে শুনতে এক ফোটা এক বাচ্চা শাঁওলী মিত্রও স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলতেন। তোতা পাখির মতো এমন সব কথা বলতেন, যা তিনি নিজেও বুঝতেন না। শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। বাবা শম্ভু মিত্র আর মা তৃপ্তি মিত্র ছাড়াও বহুরূপী নাট্যদলের অনেকেই তখন শাঁওলীদের বাড়িতে মহড়া করত। তাই সব সময়ই শাঁওলীর কানে স্পষ্ট উচ্চারণটাই আসত।

একদিন সহকর্মী জাকিরকে নিয়ে শম্ভু মিত্র বাসে উঠেছেন। কোলে দেড় বছরের শাঁওলী। বাসটায় খুব ভিড়। সেই ভিড়ের মধ্যেই কোনোরকমে একটা জায়গা পেয়ে জাকির শাঁওলীকে কোলে নিয়ে বসেছেন। এ সময় বাসের কন্ডাক্টর হঠাৎ বলে বসল, ‘এই রোক্কে, রোক্কে!’

সে কথা শুনে বাসটাও ব্রেক করেছে। আর তখন দেড়-বছুরে শাঁওলী স্পষ্ট উচ্চারণে বলছেন, ‘রোক্কে, রোক্কে। কেয়া তাজ্জব! মানুষ খুন করবেন নাকি?’

কন্ডাক্টরের মুখ হাঁ! চোখ বড় বড়!

আসলে এটা ছিল ‘উলুখাগড়া’ নাটকে বিনোদের একটা সংলাপ। শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল শাঁওলীর।

‘ডাকঘর’ নাটকে অমলের অভিনয় করতেন শাঁওলী। শম্ভু মিত্র শুধু প্রথম অভিনয়ই ঠাকুরদার চরিত্রটি করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি প্রতিবার করতেন রাজকবিরাজের চরিত্রটি। শাঁওলী তত দিনে পজ নেওয়া, অ্যাক্টরস লেফট, অ্যাক্টরস রাইট ইত্যাদি শিখে ফেলেছেন। তো, অভিনয়ের প্রথম দিন মঞ্চে অমল আর ঠাকুরদা। তৃতীয় দৃশ্য সেটি। শাঁওলী বুঝতে পারলেন, শম্ভু মিত্র সংলাপ ভুলে গেছেন। কিন্তু সেটি অমলের পজ ধরে নিয়ে বসে আছেন তিনি। শাঁওলীর মুখ তখন দর্শকদের দিকে। ছোট্ট শাঁওলী বুঝতে পারলেন, বাবা যে সংলাপ ভুলে গেছেন, সেটা তিনি বুঝতে পারছেন না। তখন অসুস্থ অমল কাতরাতে কাতরাতে পাশ ফিরল। অর্থাৎ তখন মুখ আর দর্শকের দিকে নয়। ফিস ফিস করে বাবাকে তাঁর সংলাপটা বলে দিলেন শাঁওলী। আর তখনই শম্ভু মিত্র বলতে শুরু করলেন তাঁর সংলাপ।

সূত্র: শাঁওলী মিত্র, তর্পণ, ১৪-১৫

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত